মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার এক বিদ্যালয়ের ছাত্রী মিলনায়তনে বাস করছেন প্রধান শিক্ষক। এ নিয়ে অভিভাবক মহলে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে।

স্থানীয় অভিভাবকরা জানান, জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের শিলুয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক সেলিম মিয়ার বাড়ি বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী উপজেলায় হলেও তিনি ছাত্রী মিলনায়তন দখল করে বসবাস করছেন। এতে ছাত্রীরা পড়েছে বিপাকে। বিরতীর সময় ছেলেদের সঙ্গেই ক্লাসে বসে থাকতে হচ্ছে তাদের।

বিগত কয়েক বছর ধরে ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ের ওই কক্ষটি আবাসিক হিসেবে ব্যবহার করছেন। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ। এ নিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলেও কর্ণপাত করছেন না প্রধান শিক্ষক।

এছাড়া সম্প্রতি শিলুয়া হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগের বিষয়টি ফেব্রুয়ারি মাসে তদন্ত করেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ফজলুর রহমান। তদন্তকালে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে প্রধান শিক্ষকের থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন অভিভাবকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রীরা জানান, শিলুয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম মিয়া ২০১৮ সাল থেকে ছাত্রী মিলনায়তনের একাংশ দখল করে দুই সন্তানসহ বসবাস করছেন। অপর অংশে আরও দুজন শিক্ষক থাকেন। ফলে মধ্যাহ্ন বিরতিতে ছাত্রদের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষেই সময় পার করতে হচ্ছে ছাত্রীদের। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকরাও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। দ্রুত ছাত্রী মিলনায়তনটি দখলমুক্ত করে ছাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

অভিভাবক নিলু দাস বলেন, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

অভিভাবক মাখন নায়েক বলেন, প্রধান শিক্ষক ওই কক্ষে মোটামুটি সংসার পেতেছেন। একদিন দু’দিন নয়, কয়েক বছর ধরেই তিনি বিদ্যালয়ের এ কক্ষে বসবাস করছেন অথচ পাশের উপজেলায়ই তার বাড়ি আছে। তার কক্ষে রয়েছে একটি খাট, সোফা, আলনাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র।

এ বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য দিলীপ ত্রিপাঠি বলেন, বিদ্যালয়ের পাশের উপজেলাতে প্রধান শিক্ষকের বাড়ি। কিন্তু তিনি প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ দখল করে বসবাস করছেন। এতে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সেলিম মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ছাত্রী মিলনায়তনটি পরিত্যক্ত হওয়ায় স্কুল ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তিনিসহ আরও দুজন শিক্ষক জনপ্রতি এক হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে সাময়িকভাবে বসবাস করছেন।

প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের সঙ্গে ছাত্রী মিলনায়তন রয়েছে। তাদের বসবাসে ছাত্রীদের অসুবিধা হচ্ছে না বলেও দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, কলেজের ছাত্রী মিলনায়তনকে বাসভবন বানিয়ে শিক্ষকদের বসবাস করার কোনো নিয়ম নেই। আমরা তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি, তারা ব্যবস্থা নেবেন।