মৌলভীবাজারের রাজনগরে নারী শিক্ষার পথিকৃত “গার্লস ইসলামিক ইনস্টিউট দত্তগ্রাম”
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৩৪:৪৯,অপরাহ্ন ২০ আগস্ট ২০২২ | সংবাদটি ৩৬৭ বার পঠিত
খাদিজা ইসলাম, রাজনগর, মৌলভীবাজার থেকে :
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার দত্তগ্রামে নারী শিক্ষার পথিকৃতের ভূমিকা পালন করছে “গার্লস ইসলামিক ইনস্টিটিউট দত্তগ্রাম (গীড)”। ইসলামী শিক্ষা, সাধারণ শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার সমন্বয়ে নারী শিক্ষা বিস্তারে প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে উপজেলা ব্যাপি বিপুল সুনাম অর্জন করেছে।
বুধবার (১৭ আগষ্ট) সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে গেলে কথা হয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা আয়শা আক্তার সুমি ও শাহানা আক্তার এর সাথে। শিক্ষিকাদ্বয় জানান, রাজনগর উপজেলার দত্তগ্রাম এলাকার ধর্মপ্রান ও জনহিতৈসি বেলজিয়াম প্রবাসী মৌলানা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম রাজনগর এলাকার শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত দরিদ্র, অসহায় নারী ও শিশুদের ইসলামী শিক্ষা, সাধারণ শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষায় প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে তাঁর প্রবাসের কষ্ঠার্জিত অর্থ এবং এলাকা বাসীর সহযোগিতায় ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর গার্লস ইসলামিক ইনস্টিটিউট দত্তগ্রাম(গীড) এর কার্যক্রম শুরু করেন। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা শিশু শিক্ষার্থী ৪০ জন এবং বয়স্ক শিক্ষার্থী ৩০ জন সহ মোট ৭০ জন।
প্রতিনিধি দলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের মাধ্যমে উঠে আসে শিক্ষা কার্যক্রমের নানা দিক সহ সাফল্য গাঁথা সমুহ। প্রতি শিক্ষার্থীই সহি ও শুদ্ধ উচ্চারণে কোরআন ও হাদিস অধ্যয়ন ও ইসলামী জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি বাংলা ইংরেজী, গণিত, বিজ্ঞান , ইতিহাস বিষয়ে ব্যাপক পারদর্শিতা প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছেন। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের সুললিত ও মধুর কন্ঠের কোরআন তেলাওয়াত, হামদ ও নাতে রাসুল পরিবেশনা অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ছিল।
কারগিরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষিত করার মাধ্যমে সমাজ হতে বেকার সমস্যা দূরীকরণের জন্য গার্লস ইসলামিক ইনস্টিটিউট দত্তগ্রাম(গীড) তাঁর কার্যক্রমকে সম্প্রসারিত করেছে। বর্তমানে দূ’জন প্রশিক্ষক দিয়ে নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান আছে। বর্তমানে ২০ জন শিক্ষার্থী সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহন করছেন। পর্যায় ক্রমে অন্যান্য কারিগরি প্রশিক্ষন কার্যক্রম সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম।
ইসলামী অনুশাসনে সমাজ বিনির্মানে এবং একটি সুদমুক্ত সমাজ গঠনে প্রতিষ্ঠাতার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানে একটি সমিতি গঠন করা হয়েছে। সমিতির বর্তমান সদস্যসংখ্যা ২৯ জন। প্রত্যেক সদস্য সাপ্তাহিক ২০০ টাকা করে চাঁদা প্রদান করে এক সপ্তাহে সঞ্চিত টাকার সাথে প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম আরো ১০০০/-টাকা আর্থিক সহযোগিতা করেন। সপ্তাহের সাকুল্য টাকা লটারির মাধ্যমে একজন সদস্যকে প্রদান করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সহযোগিতার পাশাপাশি সুদমুক্ত সমাজ গঠনে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমের নানাদিক তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক আয়শা আক্তার সুমি এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন দোলনা বেগম ও জনি আক্তার।
প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে আসা গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতে মধুর কন্ঠে অর্থসহ কোরআন তেলাওয়াত, হাদিস তেলাওয়াত, হামদ ও নাতে রাসুল (সাঃ) পরিবেশন করেন যথাক্রমে পপি আক্তার, নুসরাত জাহান সাদিয়া, রিয়া আক্তার, কুলছুম আক্তার, তানজিনা আক্তার, মনি আক্তার, সুমাইয়া আক্তার ও মিলি আক্তার প্রমুখ।
উল্লেখ্য যে, প্রবাসী মোহাম্মদন নজরুল ইসলাম রাজনগর এলাকার শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত দরিদ্র, অসহায় ও এতিম শিশুদের লালন-পালন ও সু শিক্ষায় প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে বিগত ২০০৪ সালে নিজস্ব ভূমিতে ‘ক্বারী ফরিদ উদ্দিন হিফজুল কোরআন মাদ্রাসা ও এতিমখানা’ নামে আরো একটি প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্টিত করেন যা বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যান মন্ত্রনালয় কর্তৃক ক্যাপিট্যাশন মঞ্জুরী প্রাপ্ত। প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ৬০জন দূস্থ ও এতিমদের জন্য আবাসিক এতিমখানা, হেফজ খানা, গণ শিক্ষা কেন্দ্র, মসজিদ, পাঠাগার ও ফ্রি চিকিৎসা সুবিধা। প্রতিষ্ঠানটিতে ১ম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত সাধারণ একাডেমিক শিক্ষা চলমান আছে। রয়েছেন বেতন ভূক্ত ৭জন শিক্ষক ও কর্মচারী। এ ছাড়াও জনাব নজরুল ইসলাম কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলায় আরো দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
এ বিষয়ে বেলজিয়াম প্রবাসী মৌলানা নজরুল ইসলামের সাথে মুটো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন ও সহযোগিতা পেলে গার্লস ইসলামিক ইনস্টিটিউট দত্তগ্রাম(গীড) থেকে মেয়েদের কর্মমুখী শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তুলার জন্য সকল ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।