শাপলার বিছানায় মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে সিলেটের শাপলা বিল
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৩৯:২৬,অপরাহ্ন ১১ জানুয়ারি ২০২৩ | সংবাদটি ১৯২ বার পঠিত
সিলেট প্রতিনিধি : ডিবির হাওর বা শাপলা বিল। সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় হাওরটি অবস্থিত। এটি ‘লাল শাপলার বিল’ নামেই পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে পরিচিত।
এখানে রয়েছে ডিবি বিল, ইয়াম বিল, হরফকাট বিল ও কেন্দ্রীবিল। এই চারটি বিলকে একত্রে লাল শাপলার বিল বলা হয়। চারটি সংযুক্ত বিলের আয়তন ৯০০ একর বা ৩.৬৪ বর্গ কিলোমিটার। এখানে প্রাকৃতিকভাবেই জলের বিছানায় শয্যা পাতে চোখজুড়ানো লাল শাপলা।
সিলেটের জৈন্তারাজ্যের রাজা রাম সিংহের স্মৃতিবিজড়িত চারটি বিলের অবস্থান আবার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে। রাম সিংহের বিলগুলো শীত মৌসুমে শাপলার রাজ্যে রূপ নেয়। বিলে ফুটে থাকে অজস্র লাল শাপলা। লতা-পাতা-গুল্মে ভরা বিলের পানিতে শত-সহস্র লাল শাপলা হার মানায় ভোরের সূর্যের কোমল আলোকেও। সবুজ পাতার আচ্ছাদনে ঢাকা পড়ে বিস্তীর্ণ জলরাশি। ভোরের আলোয় শাপলার হাসি আরও আলোকিত করে দেয় বিলগুলোকে। বেড়াতে আসা যেকোনো ভ্রমণপিপাসুর মনের দুয়ার খুলে দেয় এই শাপলা বিল।
স্থানীয়রা জানান, একটি ধ্বংসপ্রায় মন্দির আছে ডিবির হাওরের মাঝে। যে কেউ চাইলে মন্দিরটি ঘুরে দেখতে পারেন। কথিত আছে- জৈন্তা রাজ্যের এক রাজাকে এ হাওরে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল। সেই স্মৃতিতেই নির্মিত দুইশত বছরের পুরাতন মন্দিরটি এখন জীর্ণ-শীর্ণ। প্রাচীন রাজার স্মৃতিবিজড়িত এ হাওরে শীতকালে থাকে পাখিদের রাজত্ব। বিশাল হাওর শুকিয়ে যেটুকু জলাশয়- তার ওপরই পাখিদের বিচরণ বেশি।
বালিহাঁস, পাতিসরালি, পানকৌড়ি, সাদাবক ও জল ময়ুরীর মতো অতিথি পাখির ডানঝাপটায় অনন্যা রূপে সাঁজে এ হাওর।
হাওরটিতে যেতে হলে সিলেট শহর থেকে ৪২ কিলোমিটারের যাত্রাপথ। আকাশপথেও আসা যায় লাল শাপলার বিলে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে আসতে হবে সিলেটের এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তারপর সিলেট থেকে সরাসরি সিলেট-তামাবিল সড়কপথে বাস, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা অথবা প্রাইভেটকারে যেতে হবে জৈন্তাপুরে। সময় লাগবে প্রায় ১ ঘণ্টা মিনিট। জৈন্তাপুর বাজার থেকে কিছ দূর গেলেই সড়কের ডান দিকে দেখা যাবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ডিবির হাওর বিশেষ ক্যাম্প। ক্যাম্পের পাশ দিয়ে কাঁচা সড়কে এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই পৌঁছানো যাবে শাপলা বিলে। বিলে ঘুরতে নৌকার ভাড়া নেবে ৪০০ টাকা। সিলেট শহর থেকে যাওয়া-আসায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ভাড়া হচে ১৫ শ থেকে ১৮ শ টাকা।
শাপলার পূর্ণ রূপ দেখতে ভ্রমণপিপাসুদের পৌঁছাতে হবে ভোরে। সূর্যের আলো ফোটার আগেই ফুটন্ত শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে হবে। বিলের পাশে মেঘালয়, পাহাড়ের নিচে খাসিয়া সম্প্রদায়ের বসবাস। হরফকাটা ও ডিবি বিলের মধ্যে রয়েছে রাজা রাম সিংহের সমাধিস্থল।
দূর পাহাড়ে দেখা মিলবে খাসিয়াদের পান-সুপারির বাগান। প্রকৃতির বুকে শিল্পীর তুলিতে আঁকা এ যেন এক নকশিকাঁথা, মোহনীয় হাতছানিতে ডাকে প্রকৃতিপ্রেমীদের।