হতদরিদ্র মেধাবী সুনির্মলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন !
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৩৭:১০,অপরাহ্ন ২২ অক্টোবর ২০১৯ | সংবাদটি ৫৮০ বার পঠিত
সমাজের হৃদয়বান মানুষের বা কোন সরকারী বা বেসরকারী সংস্থার সহযোগীতা পেলে আরো এগিয়ে যেতে চায় সুনির্মল
মায়ের সাথে মেধাবী ছাত্র সুনির্মল
মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন, কুলাউড়া : জীবনের শুরুতেই সীমাহীন দরিদ্রতার কষাঘাতে আর বিভিন্ন অসঙ্গতির সঙ্গে নিত্য সংগ্রাম যেন নিত্য নিয়তি মেধাবী হতদরিদ্র ছাত্র সুনির্মল মল্লিকের। বহু প্রতিকুলতার সঙ্গে নিরন্তর সংগ্রাম করেও জীবনে বড় হওয়ার দুর্গম স্বপ্ন রয়েছে তার। ভালো ফলাফলে দু’চোখ ভরা উচ্ছাস আর সোনলী স্বপ্ন থাকলেও উচ্চশিক্ষার ব্যয় কীভাবে মিটবে সে দুশ্চিন্তায় সে সামনে শুধুই দেখছে নিকষ কালো অন্ধকার।
তবে সকল প্রতিবন্ধকতা দাবিয়ে এবার এইচএসসিতে পুরো উপজেলায় বিজ্ঞান বিভাগে একমাত্র গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে দরিদ্র মেধাবী ছাত্র সুনির্মল মল্লিক। তার স্বপ্ন ডাক্তার হয়ে সমাজের দরিদ্র মানুষের সেবা করার। সে সমাজের হৃদয়বান মানুষের বা কোন সরকারী বা বেসরকারী সংস্থার সহযোগীতা পেলে আরো এগিয়ে যেতে চায়।
হতদরিদ্র মেধাবী সুনির্মল মল্লিক কুলাউড়া উপজেলাধীন লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজ হতে এ বছর এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলার মাষ্টার শরাফত আলী উচ্চবিদ্যালয় হতে ২০১৭ সালে এসএসসিতে, ২০১৪ সালে জেএসসিতে এবং ২০১১ সালে নর্তন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে পিএসসিতে টেলেন্টপুল বৃত্তিসহ জিপিএ-৫ অর্জন করে সুনির্মল।
তার বাবা সুদর্শন রাম মল্লিক ২০০৬ইং সালে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যান। এরপর তার সংসারে নেমে আসে কালো মেঘের ছায়া। তার মা সাবিত্রি রাণী মল্লিক পেশায় একজন গৃহীনি। সুনির্মলের বড় ৩ বোন রয়েছেন। বাবার মৃত্যুর সময় বোনেরাও সবাই ছোট ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পরপরই বৈমাত্রেয় চাচাগণ সুনির্মলের মাকে অসহায় সন্তানগণ সহ তাদের মৈন্তাম গ্রামের বাড়ি হতে তাড়িয়ে দিয়ে ভিটে মাটি ছাড়া করলে পিত্রালয়ের সাহায্যে সাবিত্রি রানী নর্তন গ্রামে মাত্র ২শতক জমি কিনে কুড়েঘর বানিয়ে জীবনের কঠিন যুদ্ধে নেমে পড়েন। মা সাবিত্রি পরের বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করে, রাস্তায় ইট ভেঙ্গে সন্তানদের প্রতিপালনের পাশাপাশি একমাত্র ছেলে সুনির্মলের পড়ালেখাও চালিয়ে যান। কতদিন কেটেছে সুনির্মলদের উনুনে হাড়ি চড়েনি। কখনো অল্প খেয়ে কখনো না খেয়ে থাকাটা তাদের নিত্য দিনের অভ্যাসে পরনিত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সুনির্মলের মা।
৫ম শ্রেণী থেকে মায়ের সাথে সুনির্মলকেও পরিবারের প্রয়োজনে রোজগারে নামতে হয়েছে। মানুষের বাড়ী-বাড়ী গিয়ে টিউশনী করে পড়ালেখার খরচ যোগানোর পাশাপাশি মাকে এখনো সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন সুনির্মল।
সুনির্মলের ৩বোনকে অনেক কষ্টে পাত্রস্থ করেছেন সুনির্মলের মা সাবিত্রি রানী। তবে জীবনের শেষ অবলম্বন নর্তন গ্রামের ২শতক ভুমি সহ কুড়ে ঘরটুকু দেনার দায়ে বিক্রি করতে হয়েছে তাদের। তাই বর্তমানে নর্তন গ্রামের আফতাব মিয়ার দয়াক্রমে তাঁর বাড়ীর একটি কক্ষে বিনা ভাড়ায় বসবাস করেন সুনির্মল ও তার মা সাবিত্রি।
এ ব্যাপারে সুনির্মলের মা সাবিত্রি রানী মল্লিক বলেন, “আমি আমার ছেলের উচ্চতর পড়া লেখা করানোর কোন সামর্থ্য আমার নেই। সমাজের বিত্তবানদের বা সরকারী সাহায্য না পেলে আমার ছেলের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে। তাই আমি সকলের সহযোগিতা চাই।”