আফগানিস্তানের সাথে বাংলাদেশের মনোস্তাত্বিক পরাজয়
প্রকাশিত হয়েছে : ১:১১:০৩,অপরাহ্ন ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৪০০ বার পঠিত
ঊষারবাণী ডেস্ক : সারাদিন বাংলাদেশের হয়ে ব্যাট করল বৃষ্টি। ক্লান্ত হয়ে বৃষ্টি যখন হাল ছেড়ে দিল তখন আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ একমাত্র টেস্টে ড্র করার দ্বারপ্রান্তে। টেস্ট বাঁচাতে তখন বাংলাদেশকে লড়াই করতে হবে মাত্র এক ঘণ্টা ১০ মিনিট বা ১৯ ওভার। কিন্তু চার উইকেট হাতে থাকার পরও ম্যাচ বাঁচাতে পারলেন না সাকিব আল হাসানরা। বৃষ্টি ও বাংলাদেশকে হারিয়ে ঐতিহাসিক জয় তুলে নিল আফগানরা।
প্রথম দেখাতেই তারা বাংলাদেশকে হারাল ২২৪ রানে। ম্যাচ শেষে সাবেক অধিনায়ক আশরাফ হোসেন লিপুকে ফোন করার সঙ্গেই অপর প্রান্ত থেকে বললেন, ‘একদম ভালো লাগছে না। কথা বলার ইচ্ছা নেই। খুব রাগ হচ্ছে। রাখি।’
সদ্য টেস্ট ক্রিকেটে পা রাখা একটি দলের বিপক্ষে এত বাজে হার গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর মতো মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। কিছুক্ষণ পর গাজী আশরাফ জানালেন, এমন হার আসলেই ‘ন্যক্কারজনক’। এরপর চট্টগ্রাম টেস্ট নিয়ে বিশ্লেষণ করলেন এভাবে-
এটা নিশ্চয়ই বলতে হবে আমরা যেভাবে খেলেছি এতটা খারাপ দল নই। আসলে মনের বাঘ আমাদের খেয়ে ফেলেছে। বনের বাঘে নয়। কখন কোন পরিকল্পনায় আমাদের এগোতে হবে সেটা আমরা মোটেই ঠিকভাবে করতে পারিনি। প্রয়োগটা একেবারেই হয়নি। যে মানসিকতা নিয়ে খেলা হয়েছে সেটা আসলে টেস্ট খেলার মানসিকতা ছিল না। এখান থেকে অনেক কিছু ভাবার আছে।
এত বড় হার
আমরা এর আগে অনেক বড় হার দেখেছি। একটা সময় অধিকাংশ ম্যাচেই ইনিংস ব্যবধানে হারতাম। একশ’র নিচে অনেক ইনিংসেই অলআউট হয়েছি। কিন্তু একেবারে সদ্য এক টেস্টখেলুড়ে দেশের সঙ্গে এভাবে হারা সত্যিই ন্যক্কারজনক। কতটা ওভার খেলেছি আর কীভাবে খেলেছি এটা যদি বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যায়।
হারার ধরন
পঞ্চমদিনের অধিকাংশ সময়ই বৃষ্টি ব্যাট করে গেল। মাত্র এক ঘণ্টা আমাদের টিকে থাকার ক্ষমতা হল না? খুব বাজে হার হয়ে গেছে। পাঁচদিনের কখনই একটা সেশনে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকতে পারেনি। প্রতিটি সেশনই দাপট দেখিয়েছে আফগানিস্তান। মোটে খেলার যোগ্য নয় বা রান করার মতো নয় এমন উইকেটে তো আর খেলা হয়নি।
ওরাও তো এই উইকেটে ব্যাট করেছে। যখনই চাপে পড়েছে সেটা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় সেই চেষ্টাই করেছে। সফলও হয়েছে। বোলিংও দারুণ ধারাবাহিকতা রেখে করেছে। তবে আমরা এত খারাপ দল না যে এভাবে ব্যাটে-বলে একেবারে যাচ্ছেতাই করব।
ভুল কোথায়
হয়তো প্রতিপক্ষের শক্তি নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা ঠিক ছিল না। তাদের নিয়ে প্রস্তুতিও সেভাবে হয়নি। তারা বোলিংয়ে দারুণ ধারাবাহিক। আমরা চারজন স্পিনারের সঙ্গে আরও পার্টটাইমার দিয়ে বোলিং করিয়েছি। কিন্তু তাদের সঙ্গে পেরে উঠিনি।
ঘরের মাটিতে খেলেছি। দুধের শিশু একটি দলের সঙ্গে এভাবে আত্মসমর্পণ করলাম। উইকেটের দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। তারা যদি এই উইকেটে খেলতে পারে তাহলে নিজেদের বানানো উইকেটে আমরা কেন পারব না। আমাদের ব্যাটিং-বোলিং, প্রয়োগ ও পরিকল্পনায় ভুল ছিল।
ব্যাটিং অর্ডারের পরিবর্তন
সবচেয়ে অবাক লেগেছে ব্যাটিং অর্ডার দেখে। কম্বিনেশনের জন্য যেভাবে ওলোট-পালোট হল সেটা ইতিহাসে আছে কিনা তা আমার জানা নেই। এতে ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস থাকে না। আমরা শুধু চেষ্টা করেছি কীভাবে প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করা যায়। নিজেদের শক্তির ওপর জোর দেয়ার চেষ্টা করিনি।
পেসারদের দলে রেখে না খেলানো
দলে তিন পেসার রাখা হল কিন্তু তাদের খেলানো হল না। তাহলে প্রশ্ন কেন তাদের দলে নেয়া হল? এরপর যখন বিদেশের মাটিতে তাদের প্রয়োজন হবে তখন তারা কী আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে তাদের খেলিয়ে গড়ে তোলার দায়িত্ব তো আমাদেরই। আর যখন তাদের খেলোনোই হল না দলেও তো রাখার দরকার ছিল না।
সূত্র : jugantor