ঊষারাণী ডেস্ক : দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা ধর্মঘট শুরু করে। তাদের ধর্মঘটের মুখে ডিজেলচালিত বাস-লঞ্চের ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে গণহারে সব বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বাসচালক-কন্ডাক্টরদের দাবি-সব বাস ডিজেলে চলে। এ নিয়ে বাসচালক-হেলপার ও যাত্রীদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হচ্ছে।
ডিজেলের দাম বৃদ্ধি প্রতিবাদে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে সারাদেশে ধর্মঘট শুরু পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এই ধর্মঘটে জিম্মি হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। রবিবার (৮ নভেম্বর) বিআরটিএর সঙ্গে বৈঠকে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলে তুলে নেওয়া হয় ধর্মঘট।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়। আর মহানগরীতে বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িতে ২ টাকা ১৫ পয়সা করা। মিনিবাসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ২ টাকা ৫ পয়সা করা হয়। এই হিসাবে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ এবং ঢাকায় ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভাড়া বেড়েছে। বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা এবং মিনিবাসে ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, সিএনজিচালিত বাস কিংবা মিনিবাসের ভাড়া বাড়েনি। তাই এসব পরিবহনে নতুন ভাড়া আদায় করা যাবে না।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, মতিঝিল, ধানমন্ডি, বাড্ডা, মিরপুর, ফার্মগেট, বিমানবন্দর, গাবতলী, মহাখালী এবং টঙ্গীসহ বিভিন্ন রুটে চলাচল করা গ্যাসচালিত বাস কিংবা মিনিবাসে বর্ধিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তারা গ্যাসে বাস চালালেও ডিজেলের কথা বলে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে। এদের কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়ছে।
জহিরুল ইসলাম নামের এক যাত্রী ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, মতিঝিল থেকে যাবো বাংলামোটর। আগে ভাড়া ছিল ১০ টাকা। আজ আমাকে দিতে হলো ১৫ টাকা। আমার কাছ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি ভাড়া আদায় করা হয়ে। আমার জানা মতে ঢাকার বেশির ভাগ গণপরিবহন গ্যাসে চলে। অথচ কোনো পরিবহনই না কি এখন গ্যাসে চলে না। সব পরিবহন এখন ডিজেলে চলে।
ধর্মঘটে ডিজেলচালিত বাসের মালিকদের সঙ্গে গ্যাসচালিত বাসের মালিকরাও বাস বন্ধ রেখেছিলেন। তারা (গ্যাসচালিত বাস মালিক) কেন বাস চালানো বন্ধ রেখেছিল এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খান গণমাধ্যমকে বলেন, তারাও ভুক্তভোগী। তারা পরিস্থিতির শিকার। মহানগরে যে পরিমাণ বাস ও মিনিবাস চলে তার এক থেকে দুই শতাংশ সিএনজিচালিত।
তবে ২০১৯ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাজধানীতে চলা ২৫টি কোম্পানির বাসের মধ্যে ২০ কোম্পানির বাস গ্যাস চালিত। তখন শতকরা ৮০ ভাগ বাস গ্যাসে চলতো। এ সংখ্যা বর্তমানে আরও বেড়েছে। অর্থাৎ ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খানের বক্তব্যের সঙ্গে পরিসংখ্যানের তথ্যের মিল নেই।
বাস যাত্রীদের অভিযোগ, গ্যাসচালিত গাড়িতেও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। গাবতলীর যাত্রী আনিস আহমেদ বলেন, আসলে কোনটা ডিজেলচালিত আর কোনটা গ্যাসচালিত এটা বুঝবো কীভাবে? সবাই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। আসলে সব ভোগান্তি সাধারণ মানুষের।
সোমবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অধিক হারে মুনাফার সুযোগ করে দিতে সরকার বাস ও লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির পর সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সহনীয় মাত্রায় ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও এই ভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তা প্রতিফলন হয়নি।
এদিকে সোমবার সকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরিবহন মালিক -শ্রমিকদের হুশিয়ার করে বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে কোনোভাবেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না। কেউ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
তবে বাসটি ডিজেলে না কি গ্যাসে চলে বাইরে থেকে তা বোঝার উপায় নেই। বাসের পেছনের নিচের অংশে সিলিন্ডারের উপস্থিতি থাকলে বুঝতে হবে সেটা গ্যাসচালিত। এছাড়া চালকের পাশে একটি মিটার থাকে। এই মিটার দেখেও বোঝা যায়। তবে যাত্রীরা বিষয়টি বুঝতে পারবেন না। বিষয়টি বুঝতে চালক কিংবা হেলপারের সহায়তা নিতে হবে।
গ্যাসচালিত বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার গণমাধ্যমে বলেন, সিএনজির সিলিন্ডার তো গাড়িতেই থাকে। যাত্রীরা একটু কষ্ট করে দেখে নিয়ে তারপর ভাড়া দিলেই হয়। আপনারা যখন ভাড়া দেবেন অবশ্যই একটু দেখে নিয়েন, বাসটি সিএনজিচালিত না ডিজেলচালিত।
সর্বশেষ ২০১৫ সালে মহানগরে বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং মিনিবাসের জন্য ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। আর ২০১৬ সালে দূরপাল্লায় ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১ টাকা ৪২ পয়সা।