বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম রয়েছে এরমধ্যে ফেসবুক, টুইটার, স্ন্যাপচ্যাট, ইন্সট্রাগ্রাম, টিকটক, ট্যাগজ, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম অনেকেই ব্যবহার করেন। এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও আরও বেশ কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছে। যে যার সুবধিামত এক বা একাধিক সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করেন। এরমধ্যে ফেসবুক, টুইটারই বেশি দেখা যায়। সেখানে প্রতিনিয়ত নানাজনে নানা রকম পোস্ট দেন ও শেয়ার করেন। এরমধ্যে অনেক বেশি দেখা যায় ফেসবুকে। অনেকেই জেনে কিংবা বুঝে আবার কেউ কেউ না বুঝেও আবেগতাড়িত হয়ে এক একটি বিরোধি পোস্টে লাইক দেন, শেয়ার করেন। যারা এই ধরণের কাজটি করে থাকেন তারা নিজেরাও জানেন না নিজের অজান্তেই আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কত বড় ভুল করে ফেলেছেন। একটি লাইক কিংবা শেয়ার তার জীবনের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে এবং স্বপ্নও ভঙ্গ হতে পারে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন তাদেরকে আগে থেকেই সতর্ক করা হচ্ছে কিন্তু অনেকেই সেটা মানছেন না। তবে আমেরিকায় যারা আসতে চান, কিংবা গ্রিনকার্ড পেয়েছেন, সিটিজেনশিপ পেতে চান তাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। এর আগেই আমেরিকার বিভিন্ন দেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলো সকলের অবগিতর জন্য এমনও জানিয়েছিল যে এখন থেকে আমেরিকায় যেতে আগ্রহী আবেদনকারীদের আবেদনপত্র বিবেচনা করার সময় তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোও খতিয়ে দেখা হবে।
সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বৎসর ভর্তির জন্য এসেছিলেন ফিলিস্তিনি তরুণ ইসমাইল আজাউইর। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান এবং ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন বিমানবন্দরে আসার পর তাকে ইমিগ্রেশন থেকে ভেতরে প্রবেশ করার জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। তাকে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার কারণে তাকে ফিরে যেতে হয়। যদিও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচেষ্টায় পরবর্তীতে হার্ভার্ডে আসার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি নিজে আমেরিকার বিরুদ্ধে পোস্ট দিয়েছেন কিনা তা জানা যায়নি, যেটা জানা গেছে তা হলো তার এক বন্ধু আমেরিকা বিরোধী স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেই কারণেই তাকে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এটি অনেক মানুষের জীবনেই শিক্ষনীয় একটি বিষয়। তাহলো যারা আমেরিকায় আসতে চান তাদেরকে এমন কোন ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যাবে না, যিনি আমেরিকা বিরোধী কিংবা আমেরিকার সম্পর্কে বিরোধিতা করে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নেতিবাচক প্রচার প্রচারণা চালান। এই ধরণের কেউ যদি কারো সঙ্গে ট্যাগ থাকে কিংবা ফ্রেন্ডস থেকে থাকলেও তাকে যতদ্রæত সম্ভব বøক করে দিতে হবে। নিজে যেমন আমেরিকার বিরুদ্ধে কোন পোস্ট দেওয়া যাবে না। তেমনি কেউ দিলে সেটাকে সমর্থন করে লাইক দেওয়া যাবে না ও শেয়ার করা যাবে না। বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন যারা আমেরিকায় আসতে চান তাদেরকে মনে রাখতে হবে এখানে আসার জন্য ভিসার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর থেকেই এবং তার আগের সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্তত পাঁচ থেকে দশ বছরের তথ্য কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাই ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারে। আর এতে করে যে কোন সময়ে বড় ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি আমেরিকায় আসার স্বপ্নও ভঙ্গ হতে পারে। তাই যারা এই ধরণের কাজ করছেন তাদেরকে এইগুলো পরিহার করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে। আমিরকায় যারা আসতে চান, থাকতে চান, গ্রিন কার্ড পেতে চান কিংবা সিটেজেনশীপ পেতে চান তাদেরকে আমেরিকার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই কাজ করতে হবে।
আমেরিকায় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা হয়। অফিসিয়ালী ফেসবুক ও টুইটারের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। এগুলোকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখা দেয়। একজনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর প্রোফাইল ও হিস্ট্রি দেখে তার সম্পর্কে বিচার বিশ্লেষন করা সম্ভব তিনি কেমন মানুষ, তার মনোভাব কী, তিনি কি ধরনের কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তার নেটওয়ার্ক কেমন, তিনি কাদের সঙ্গে চলাফরা করেন ও সম্পর্ক রাখেন। এছাড়াও অন্যান্য সকল তথ্যও সেখানে পাওয়া যায়। এছাড়াও তার বিগত দিনের কর্মকান্ডের হিস্ট্রিও থাকে।
জানা গেছে, আমেরিকায় যারা আসতে চান তাদের বিষয়গুলো আবেদনের পর স্ব স্ব দেশে অবস্থানরত দূতাবাসের সংশ্লিস্ট কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখবেন। এরপর তারা সিদ্ধান্ত নিবেন। ইতোমধ্যে এগুলো দেখা শুরু হয়েছে। যারা এখানে আসবেন তাদের ব্যাপারেও বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও খতিয়ে দেখবেন। কারণ আমেরিকায় কেউ ভিসা পেলেই তিনি ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন এমনটি নয়। এই ব্যাপারে বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তই চ‚ড়ান্ত। তারা যে সিদ্ধান্ত নিবেন সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। এছাড়া কেউ যেদি আমেরিকায় চলে আসেন ও ভেতরে প্রবেশের সুযোগ পান তাদেরকেও সতর্ক থাকতে হবে। তিনি যদি এখানে আসার পর ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য, গ্রিন কার্ড পাওয়ার জন্য আবেদন করেন কিংবা গ্রিন কার্ড পেয়েছেন বিবাহ সূত্রে গ্রিন কার্ড পেয়ে থাকলে তিন বছর পর আর যদি অন্য ক্যাটাগরীতে গ্রিন কার্ড পান তাহলে কার্ডের পাঁচ বছর মেয়াদপূর্তির পর কিংবা পাঁচ বছর হওয়ার তিনমাস আগে সিটিজেন শিপের জন্য আবেদন করে তাহলে ইউএসসিআইএস, ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, সিবিপি কর্তৃপক্ষ তাদের দেওয়া আবেদনের বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করবে। ব্যাকগ্রাউন্ড চেকের সময়েও তা খতিয়ে দেখা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে একজনের নাম, ফোন নম্বর, ঠিকানা, ইমেইল এ্যাডড্রেস, তার ব্যবহার করা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর তথ্য পর্যালোচনা করতে পারে। এই জন্য নিজেস্ব কিছু অ্যাকাউন্টও তৈরি করে সেগুলো করতে পারে। এই ব্যাপারে যারা জানে না, তারা যে কোন সময়ে বিপদে পড়তে পারেন। আর নজরদারি করার সময়ে যদি কারো কোন বিষয়ে আমেরিকা বিরোধি মনোভাব কিংবা কর্মকান্ড ধরা পড়ে তাহলে তার আবেদন নাকচ হতে পারে। বাতিল হতে পারে গ্রিন কার্ড কিংবা সিটিজেন শিপের আবেদনও নাকচ হয়ে যেতে পারে।
বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যারা ব্যবহার করেন তাদের অনেককেই দেখা যায় তারা অনেক সময় অনেক অপরিচিত মানুষের সঙ্গে পরিচিত হোন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পর্কে বজায় রাখেন। অনেক সময় অপরিচিত কেউ ফ্রেন্ডস রিকোয়েস্ট পাঠালেও একসেপ্ট করেন। ফলে একজন সম্পর্কে না জেনে শুনে কারোই সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা উচিত নয়। এমনকি নিজেকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। যাদের বন্ধুদের তালিকায় এমন কোন ব্যক্তি রয়েছেন যিনি আমেরকিাকে পছন্দ করে না কিংবা আমেরিকা সম্পর্কে বিরোধি কথাবার্তা বলে কিংবা প্রচার প্রচারণা চালায় সেই ধরণের কোন মানুষ ফ্রেন্ড লিস্টে থেকে থাকলে তাদেরকে এখন থেকেই বাদ দিতে হবে। এই ধরণের ব্যক্তিকে বাদ দিলেও অন্তত কখনো প্রশ্নের মুখোমুখি হলে আবেদনকারী বলতে পারবেন তিনি তাকে বাদ দিয়েছেন তালিকা থেকে কিংবা ব্লক করেছেন। সেই ক্ষেত্রে ইতিবাচক হতে পারে। কিন্তু যদি বাতিল না করেন ও ফ্রেন্ডস লিস্টে যুক্ত থাকে এবং আমেরিকা বিরোধি প্রচারনা চালাতে গিয়ে পোস্ট দিতে থাকে এতে করে ওই সব পোস্টের জন্য যিনি সম্পর্ক লেখে চলেছেন তিনি ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে পারবেন না। তাই যারা সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করছেন তারা এখন থেকেই সতর্ক হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধমে সক্রিয় থাকতে পারেন। ইতামধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিমাবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষও এক একজনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্যগুলো খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন। এর ফ্রলশ্রুতিতে যাদের ব্যাপারে তথ্য ও প্রমাণ পাচ্ছেন সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
সূত্র : ঠিকানা ইউএস