স্কুল/উচ্চমাধ্যমিক কলেজ ম্যানেজিং কমিটি ; সভাপতির যোগ্যতা ও ক্ষমতার ব্যবহার
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:২১:০২,অপরাহ্ন ১০ জুন ২০২০ | সংবাদটি ৮০৫ বার পঠিত
এই কমিটির উদ্দেশ্য হলো স্কুল যেন ভালোভাবে চলে বা স্কুলের সার্বিক উন্নয়নে সব সময় সহযোগিতা করা। কিন্তু এই কমিটি কি সত্যিকার অর্থে পারে তাদের কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে? অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, দেশের অধিকাংশ স্কুলেই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বে যিনি থাকেন তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত হয়ে থাকে। একজন সভাপতি হলেন স্কুলের অভিভাবক; সুতরাং তার শিক্ষাগত যোগ্যতার যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে তিনি কীভাবে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্নকারী একজন শিক্ষককে দিকনির্দেশনা দেবেন! স্যালুকাস !
অনেক সময় এসব সভাপতি শিক্ষকদের সঙ্গে অনায়াসে খারাপ আচরণ করেন। পুরো স্কুলের হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে অনেক সময় বিভিন্ন কারণে শিক্ষকরা একা সামলাতে পারেন না, তখন সভাপতির কার্যকর ভূমিকা রাখতে হয়। একজন অশিক্ষিত সভাপতি কী করে ছাত্রদের তার বক্তব্যের মাধ্যমে শান্ত করবেন। প্রতিষ্ঠানের অভিভাবকের যদি কোনো একাডেমিক যোগ্যতা না-ই থাকে, তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার দৌড় আর কতটুকুই-বা হবে।
কমিটির অন্য সদস্যদের অবস্থা আরও নাজুক। তাদের অনেকেই শুধু নামের কারণে রাজনৈতিক কিংবা টাকার দাপটে স্কুল কমিটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হয়ে থাকেন। তারা নিজেদের ওই প্রতিষ্ঠানের মূল হর্তাকর্তা ভাবেন এবং প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মনে করে ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত শিক্ষকদের ওপর চাপিয়ে দেন।
একটি স্কুলে একবার এক মজার ঘটনা ঘটে। কোনো এক স্কুলের অভিভাবক সদস্যের ছেলে পরীক্ষায় খুব খারাপ রেজাল্ট করে। এতে ছেলেকে তার কারণ জিজ্ঞেস করাতে সে বলে, স্যার সিলেবাস ভালোভাবে পড়ায়নি। ব্যস, ওই অভিভাবক সদস্য তেলে বেগুনে জ্বলে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে ধমকের স্বরে বলছেন, এই স্কুলে সিলেবাস পড়ায় কোন শিক্ষক? না হেসে উপায় নেই, এই হলো কমিটির সদস্যদের শিক্ষার ও যোগ্যতার নমুনা।
কমিটির সব সদস্য যেমন-তেমন, সভাপতির আসনটি যেন একটি লোভনীয় আসন। সংসদ সদস্য তার দলের বা অনুসারীর কাউকে ওই পদে বসান। সে কী পাস বা তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটুকু তা ভেবেও দেখা হয় না। এসব সভাপতি অনেক সময় তাদের পছন্দমতো বা কথামতো না চললে শিক্ষকদের অন্যায়ভাবে ছাঁটাই বহিষ্কার করে বেতনভাতা পর্যন্ত বন্ধ করে রাখে। অনেক সময় নালি (পাট )বনের অথর্ব বিড়াল নিজেকে বাঘ মনে করতে থাকে। সে শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনাকেও অমান্য করে।
তবে আনন্দের কথা হলো, বেসরকারি স্কুল ও কলেজের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এনটিআরসির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াটি চলমান হওয়া। স্কুল কমিটির ক্ষমতা খর্ব করে কেবল যোগ্য প্রার্থীরাই যাতে নিয়োগ পেয়ে থাকে, সেদিকটি বিবেচনা করে শিক্ষক নিয়োগের যে বিশাল অর্থ বাণিজ্য হতো, তা বন্ধ করা। কিন্তু এই নিয়োগ বাণিজ্য সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হলে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও কম্পিউটার অপারেটরের নিয়োগের ক্ষেত্রেও স্কুল পরিচালনা পরিষদের ক্ষমতা খর্ব করে অন্যান্য শিক্ষক নিয়োগের মতোই এনটিআরসিকে নিয়োগভার দিতে হবে।
বর্তমান সরকার শিক্ষাবান্ধব সরকার। কাজেই জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে একজন সভাপতির কমপক্ষে গ্র্যাজুয়েট ও কমিটির অন্য সদস্যদের ইন্টারমিডিয়েট পাস থাকা বাঞ্ছনীয়। বিষয়টি যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এখনই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় না করে, তাহলে আগামীর প্রজন্ম ধীরে ধীরে অন্ধকারের দিকে যাবে, এটাই স্বাভাবিক।
লিখক :সোলায়মান মোহাম্মদ,শিক্ষক, গাজীপুর