কুলাউড়ায় জমি নিয়ে বিরোধ, পুলিশ যেখানে প্রতিপক্ষের ভুমিকায়
প্রকাশিত হয়েছে : ২:১৬:১৫,অপরাহ্ন ২৪ আগস্ট ২০২০ | সংবাদটি ১০৭২ বার পঠিত
মাহবুব রুমেল, কুলাউড়া প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে জমি-জমা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের কয়েক দফা হামলায় নিরিহ পরিবারের উপর নির্যাতন ও কুলাউড়া থানা পুলিশের অতি উৎসাহী হয়ে নির্যাতিত পরিবারকে বার বার মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলহাজতে প্রেরন করে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্যাতিত পরিবার বারবার কুলাউড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন অভিযোগই মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি কুলাউড়া থানা। অধিকিন্তু নির্যাতনকারীদের মামলাকে বারবারই রেকর্ড করেই চলেছে থানা কর্তপক্ষ।
গত ১৫জুলাই ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে। এ ঘটনায় চরম নির্যাতিতা লিলি বেগম, মিথ্যা মামলায় কারাভোগ করে সদ্য জামিনে মুক্ত লিলি বেগমের স্বামী সাইফুল সিদ্দিকী, কুলাউড়া থানা জমাকৃত অভিযোগের কপি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পক্ষদ্বয়ের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত জায়গা জমি নেয়ে বিরোধ চলমান ছিল। ঘটনার দিন সকাল ১১টার সময় নির্যাতিতার স্বামী সাইফুল সিদ্দেকী সহ পরিবারে সকল পুরুষ লোক বাড়ীতে না থাকার সুযোগে সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ভয়ংকর হিংস্র ও বদমেজাজি সেলিনা বেগম তার ছেলে সাহান মিয়া,মেয়ে সামিয়া আক্তার, জাহাঙ্গির মিয়া ও তার স্ত্রী লাকি বেগম এবং মেয়ে লাবনী বেগম এবং খাজুরুন নেছা মিলে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিতহয়ে লিলি বেগমের ঘরে অতর্কিতে আক্রমন চালায়। নির্যাতিতা লিলি বেগমকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিবাদীগণ আক্রমন করিলে তার মেয়ে লিজু বেগম ও সোহেলের স্ত্রী রোকসানা বেগম তাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে বিবাদীদের অমানুষিক নির্যাতনে লিলি বেগম, মেয়ে লিজু বেগম, সোহেল মিয়ার স্ত্রী রোকসানা বেগম, নজরুল ইসলামের স্ত্রী রুমি বেগম এমনকি লিলি বেগমের ছেলে রাজু মিয়া, সোহেল ও রোকসানার ছেলে নয়ন মিয়া সহ কেউই বিবাদীদের দায়ের কোপ, লাঠির আঘাত, লাথি, ঘুষি হতে রেহাই পায়নি। বিবাদী সাহান মিয়া, সেলিনা বেগম ও সামিয়া বেগম মিলে লিলি বেগম ও রোকসানা বেগমের কাপড় টেনে ছিড়ে শ্লীলতাহানী ঘটায়। লিলি বেগমের ঘরের ড্রয়ারের তালা ভেঙ্গে দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার নিয়ে যান বিবাদী সেলিনার মেয়ে সামিয়া বেগম। এছাড়া বিবদাীগণ বাড়ীর টিনের বেড়া ও ছাউনীযুক্ত ঘরটি ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দেন। এত সর্বমোট প্রায় দেড় লক্ষটাকার ক্ষতি হয়। নির্যাতিতদের আর্ত চিৎকারে পার্শবর্তী লোকজন ছোটে এল বিবাদীগণ ক্ষান্ত হয়।
নির্যাতিতা লিলি বেগমের স্বামী বরমচাল বাজারের জারা ইলেকট্রনিক্সে কর্মরত সাইফুল সিদ্দিকী মোবাইল মাধ্যমে স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনের নির্যাতিত হওয়ার খবর পেয়ে নিজ বাড়ীতে গিয়ে তাদের কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে সেখান হতেই কুলাউড়া থানার দারগা রফিকুল ইসলাম সাইফুলকে আটক করে মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করেন।
এ বিষয়ে সরেজমিনে খোজ নিয়ে এবং ফুলেরতল বাজার বনিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন ও সেক্রেটারী হেলাল খান স্মাক্ষরিত প্রত্যয়ন এবং দোকানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ হতে দেখা যায়, ঘটনার সময় সকাল ৯টা হতে ১১.২০ ঘটিকা পর্যন্ত পুলিশের হাতে আটককৃত সাইফুল সিদ্দিকী বরমচাল বাজারস্থ জারা ইলেকট্রনিক্সে কর্মরত ছিলেন। অথচ পুলিশ তাকে আটক করে মামলার প্রধান আসামী সাজিয়ে কোর্টে চালান করে। তাছাড়াও ঘটনার সময় ভাটেরা রাবার বাগানে কর্মরত একই মামলার অপর আসামী সোহেল আহমদ তার কর্মস্থলেই দায়িত্বরত ছিলেন,যা ভাটেরা রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক এ.কে.এম.হুমায়ুন আহমদ স্মাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্রে নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু কুলাউড়া থানা কর্তৃপক্ষ তাকেও মামলার অন্যতম আসামি হিসেবে মামলা দায়ের করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৫ এপ্রিল বিবাদীগণের দ্বারা একই কায়দায় পরিকল্পিত হামলার স্বীকার হয়েছিলেন সাইফুল সিদ্দিকী ও তার পরিবার। ঐদিনই হিংস্র সেলিনা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যদের আসামী করে কুলাউড়া থানায় অভিযোগও দিয়েছিলেন সাইফুল সিদ্দিকী। কিন্তু তার অভিযোগকে পুলিশ গুরুত্ব না দিয়ে ঘটনার ২৫দিন পর ১০ মে তারিখে সেলিনা বেগমের মিথ্যা অভিযোগকেই মামলা হিসেবে রেকর্ড করে কুলাউড়া থানা। সেলিনা বেগমের ঐ মামলার ঘটনার তারিখ ঐ ১৫ এপ্রিল, কিন্তু মামলায় দাখিলকৃত চিকিৎসা সনদ অনুযায়ী তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করেছেন ২৩দিন পর ৭ জুন তারিখে। উক্ত মিথ্যা মামলায় রোকসানা ও সোহেলের ছেলে হৃদয় আহমদ হাজত কেটেছেন। এছাড়া গত ১৫জুলাই তারিখে বিবাদীগণের দ্বারা আরো এক দফা হামলা নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন সাইফুল সিদ্দেকী ও সোহেল মিয়ার পরিবার। সাইফুল মিয়ার স্ত্রী লিলি বেগম বাদী হয়ে কুলাউড়া থানায় অভিযোগও দিয়েছিলেন। কিন্তু কর্তপক্ষ সেটিকেও মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি।
আরো উল্লেখ্য যে, বারবার নির্যাতনের স্বীকার সাইফুল সিদ্দেকী ও তার পরিবার গত ১০ মার্চ অতিরিক্ত ম্যাজিষ্ঠ্যাট আদালত মৌলভীবাজারে জানমালের হেফাজত চেয়ে মামলা এবং অতিরিক্ত ম্যাজিষ্ট্র্যাট আদালত মৌলভীবাজারে বিরোধীয় জায়গায় বিবাদীগণের বিরুদ্ধে ১৪৪ধারায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে নির্যাতিত সাইফুল সিদ্দেকী বলেন, বিবাদীদের হামলায় প্রায় মরনাপন্ন স্ত্রীর চিকিৎসা করানোর সুযোগ না দিয়ে দারগা রফিক আমাকে হাসপাতাল হতে আটক করে মিথ্যা মামলায় কোর্টে চালান করেছিলো। আমার প্রতিপক্ষের অভিযোগ পেলেই সেটিকে মামলা রেকর্ড করে আমাদের দৌড়ানু শুরু করে কিন্তু আমার কোন অভিযোগকেই পাত্তা দেয়নি পুলিশ। পুরুষ শুন্য বাড়ীতে আমার মেয়েটিও পুলিশী হয়রানী হতে রেহাই পায়নি। এক কথায় পুলিশই এখন আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ। আমি মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবহিত করেছি। তিনি কুলাউড়ার অফিসার ইনচার্জকে আমার সকল অভিযোগকে মামলা হিসেবে নেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন কিন্তু এখনো কোন ফল পাইনি। জামিনে ফিরে ওসি সাহেবের সাথে একবার দেখা করে অত্যন্ত দূর্ব্যবহারের স্বীকার হয়েছি। এখন থানায় খোঁজ নিতে যেতে সাহস পাচ্ছিনা,পুলিশ যদি আবারো মিথ্যা মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করে দেয়।
কুলাউড়া থানা অফিসার ইনচার্জ(ওসি) ইয়ারদৌস হাসান জানান,উভয় পরিবার একই পরিবারভুক্ত। তবে এক পক্ষের সেলিনা বেগম ও অপর পক্ষের সাইফুল অত্যন্ত হিংস্র ও ঝগড়াটে প্রকৃতির। এক পেশে মামলা গ্রহন বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে আশ্বস্থ করেন।
এ বিষয়ে কুলাউড়া থানার দারগা রফিকুল ইসলাম জানান,সাইফুল সিদ্দেকী ঐ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা নয়, জমি কিনে এলাকায় বসবাস করছে,পক্ষান্তরে সেলিনা বেগম কৃষ্ণপুর গ্রামের প্রাচীন বাসিন্দা। বিধবা সেলিনা বেগম ও তার কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে সাইফুলে ও তার পরিবারের দীর্ঘদিন যাবত নানা উপায়ে নির্যাতন করে আসছে যা স্থানীয় অনেক প্রচেষ্টায় থামানো যায়নি। সেলিনা বেগমের অভিযোগ প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় সাইফুলকে আটক করে কোর্টে চালান করা হয়েছিল। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে।
ঘটনা বিষয়ে বিবাদী সেলিনা বেগমকে মুটো ফোনে কল দিলে তার মেয়ে ছামিয়া বেগম কল রিসিভ করে তার মা অসুস্থ এবং কথা বলতে অপারগ বলে জানান। পরে ছামিয়া বেগম বলেন, সাইফুল ও তার পরিবারের সদস্যরা কয়েক দফা তাদের উপর নির্যাতন চালিয়ে তাদের মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে সাইফুলদের ভয়ে আমরা বাড়ী ছেড়ে নানা বাড়ী অবস্থান করছি।