কুলাউড়ার আমিন উদ্দিন দেশের ১৬তম এটর্নি জেনারেল
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:০৩:৩৬,অপরাহ্ন ০৯ অক্টোবর ২০২০ | সংবাদটি ৬৮২ বার পঠিত
মেহেরনিগার তাজকিয়া, বিশেষ প্রতিনিধি : ভাটি বাংলার গর্বের সন্তান, হাকালুকি হাওর পারে তমাল,হিজল,কড়চ ও বরুনের বানানী ছায়া সুনিবিড় শালুক-শিঙ্গাই খুঁজে শৈশব ও কৈশোর পার করা সিলেটের কৃতিসন্তান, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের বাদেভূকশিমইল গ্রামে জন্ম গ্রহনকারী আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন (এ.এম.আমিন উদ্দিন) বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের নতুন এটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার তাকে ১৬তম অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি জানিয়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ড. মো. রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিনকে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা যান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বাংলাদেশের ১৫ তম অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। আমৃত্যু এই পদেই ছিলেন তিনি।
নতুন নিয়োগ পাওয়া অ্যাডভোকেট আবু মোহাম্মাদ আমিন উদ্দিন আইন-অঙ্গনে এ এম আমিন উদ্দিন নামেই বেশি পরিচিত। তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি। চলতি মেয়াদে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ থেকে তিনি নির্বাচিত হন। ২০১৯-২০ সেশনেও তিনি সভাপতি হয়েছিলেন। এর আগে সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন প্রায় তিন দশক ধরে আইন পেশায় নিয়োজিত এই আইনজীবী।
এ.এম.আমিন উদ্দিনকে এটর্নিজেনারেল নিয়োগের ঘোষনা হওয়ামাত্রই তার নিজ এলাকা মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সর্বস্তরের মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা। দল মত নির্বিশেষে তাঁর এ ঐতিহাসিক নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ জনতা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কুলাউড়া কৃতি সন্তান আমিন উদ্দিনের নিয়োগ শুধু কুলাউড়ার নয় পুরো সিলেটের জন্য অত্যন্ত গৌরবের।
আমিন উদ্দিনের বর্ণাঢ্য জীবন : এডভোকেট আমিন উদ্দিন ১৯৬০ সালে বৃহত্তর সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের ‘বাদে ভূকশিমইল’ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ও উচ্চশিক্ষিত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। বাবা এম.এ.গণি ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের ডেপুটি রেজিষ্ট্রার। সজ্জন ও পরোপকারী ব্যক্তি হিসেবে তিনি সর্বমহলে অত্যন্ত পরিচিত ছিলেন। এডভোকেট আমিন উদ্দিনের মা মরিয়ম বেগম ছিলেন পুরোদস্তুর একজন গৃহিনী ও শিক্ষানুরাগী।
কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের গোবিন্দপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। পরে তিনি পিতার কর্মস্থল ঢাকার ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুলে ভর্তি হোন এবং অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে ১৯৭৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হোন। পরে ‘ঢাকা কলেজ’ থেকে গ্র্যাজুয়েশন এবং ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ল কলেজ’ হতে এল.এল.বি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা জগন্নাত কলেজ হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এর পরপরই তিনি নিজেকে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত করেন। ১৯৮৭ সালের সেপ্টেম্বরে আইনজীবী সনদ পান আমিন উদ্দিন। এরপর ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন তিনি। ১৯৮৯ সালে হাইকোর্টের সনদ নেন আমিন উদ্দিন। পরের বছর হাইকোর্ট বারের সদস্য হওয়ার পর থেকে আইনি পেশায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। পেশার প্রতি প্রচন্ড আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার ফলে ক্রমান্বয়ে তার সফলতা আসতে থাকে। আদালত পাড়ায় তাঁর সততায় মুগ্ধ হয়ে বিচারপতি ও আইনজীবি সহ সবার কাছে তিনি অত্যন্ত প্রিয় হয়ে উঠেন। প্রধান বিচারপতির নিকট হতে গ্রহন করেন সিনিয়ন আইনজীবির সম্মান সূচক খেতাব।
১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের ‘ডেপুটি এটর্ণি জেনারেল’ নিযুক্ত হোন। ২০০৬-০৭ মেয়াদে তিনি সুপ্রীমকোর্ট বার কাউন্সিল নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হোন। ২০১৯-২০ তিনি সর্ব প্রথম সিলেটি আইনজীবি হিসেবে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট বার কাউন্সিলের সভাপতি নির্বাচিত হোন। ২০২০-২১ মেয়াদেও সৎ,পরিচ্চন্ন কর্মতৎপর ও আদালত পাড়ায় সার্বিক উন্নয়নের আস্থার প্রতিক হিসেবে বিবেচি আমিন উদ্দিন আবারো সভাপতি নির্বাচিত হন।
সুপ্রীমকোর্ট বার কাউন্সিলের সভাপতি এডভোকেট আমিন উদ্দিনের স্ত্রী ‘আফসারী আমিন শিবলী’ একজন শিক্ষানুরাগী ও সমাজকর্মী। রায়হান আমিন ও নাহিয়ান আমিন নামে তাদের দুই পুত্র সন্তান রয়েছে।
আমিন উদ্দিনের সহোদর ভাই আবু মোহাম্মদ বদর উদ্দিন,আবু মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, বোন হাসনা বেগম, চাচাতো ভাই আফতাব উদ্দিন ও ভাতিজা অধ্যাপক মোহাম্মদ মোতাহের হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তারা এ.এম,আমিন উদ্দিন এর এ যুগান্তকারী নিয়োগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বিভিন্ন মহলের অভিনন্দন : কুলাউড়ার কৃতি সন্তান এ.এম.আমিন উদ্দিন বাংলাদেশ সরকারে এটর্নি জেনারেল নিযুক্ত হওয়া নিজ এলাকাসহ সর্বমহল হতে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে। নতুন এটর্নি জেনারেল কে স্বাগত জানিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী মোঃ সাহাব উদ্দিন আহমদ এমপি, সাবেক চীফহুইপ বীর মুক্তিযুদ্ধা ডঃ আব্দুস সহিদ এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামিলীগের সাবেক সাংগটনিক সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ এমপি, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি নেছার আহমদ এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামিলীগের সাংগটনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শফি আহমদ সলমান, কুলাউড়ার পৌর মেয়র আলহাজ্ব শফি আলম ইউনুছ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস.এম.জাকির হোসেন, কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামিলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেনু, সাধারণ সম্পাদক আসম কামরুল ইসলাম, ভূকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মনির, ভাটেরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ এ,কেেএম নজরুল ইসলাম, ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মমদুদ হোসেন, পৃথ্বিম পাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নবাব আলী বাকর খান হাসনাইন, কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বাচ্চু,ভাসানী ফাউন্ডেশন এর কেন্দ্রীয় সম্পাদক অধ্যাপক মোতাহের হোসেন, উপজেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি আপতাব উদ্দিন আহমদ প্রমুখ।