
আফজালের পরিচয় : আফজাল হোসাইন ১৯৮৫ সালের ১ মার্চ উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পাট্টাই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৃত ক্বারী আব্দুল লতিফ ও মায়ের নাম গৃহিণী মোছাৎ ফজিরুন বেগম। পরিবারের ৪ ভাইদের মধ্যে আফজাল তৃতীয়। তার ২ বোনও রয়েছে। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে।
যেভাবে শুরু : মায়ের অদম্য প্রচেষ্ঠায় সে স্থানীয় ভাবে পড়াশোনা শেষ করে সিলেটের একটি মাদ্রাসা থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। প্রতিবন্ধি হওয়ার কারণে অনেকভাবে সে অবহেলার শিকার হয়েছিলেন। তবুও থেমে থাকেনি তাঁর ছুটে চলা। টাইটেল পাশ করে মায়ের অনুরোধ রাখতে গিয়ে এলাকায় এসে ফার্মাসিটিক্যাল ব্যবসা শুরু করেছেন।
আফজালের পড়াশোনা : আফজাল স্থানীয় জামেয়া ইসলামিয়া কর্মধা টাইটেল মাদ্রাসা থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। পরে তাঁর মা ফজিরুন বেগমের প্রচেষ্ঠায় সিলেট খাস্তবীর দারুস সালাম মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হন। এরপর সিলেট বিশ্বনাথের জামেয়া ইসলামিয়া মাদানিয়া মাদ্রাসা থেকে টাইটেল (মাস্টার্স) সম্পন্ন করেন। পড়াশোনা থাকাকালীন সময়ে তাঁর জন্য কয়েকটি লজিং বাড়ি দেখা হয়। কিন্তুু কোন লজিং বাড়িতে তার ঠাঁই হয়নি। কারণ সে শারিরীক প্রতিবন্ধী বলে। পরবর্তীতে বিশ্বনাথের একটি বাড়িতে বিপদকালীন সময়ের জন্য চারমাসের লজিং এ থাকার ব্যবস্থা করা হয় যেন সে চারমাসের মধ্যে আরেকটি লজিং খুজে সেখান থেকে স্থানান্তর হয়। কিন্তুু সেখানে তাঁর আচরণে মুগ্ধ হয়ে সেই বাড়িতে আট বছর অতিবাহিত করে টাইটেল পাশ করেন। পরেও লজিং বাড়ির মালিক তাকে রাখতে চায়। কিন্তুু পড়ালেখা সম্পন্ন করার পর কম্পিউটারসহ ফার্মেসী ট্রেনিংয়ের জন্য সেখান থেকে চলে যেতে হয়।
আফজালের ব্যবসা : পড়াশোনা শেষে তাঁর মায়ের অনুরোধ রাখতে গিয়ে এলাকায় ফিরে আসেন আফজাল। ২০১০ সালে মাত্র ২৩০০০ হাজার টাকা পুজি নিয়ে স্থানীয় কাটালতলী বাজারে ফার্মেসী ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর জন্য বিকাশের এজেন্ট ও ফেক্সিলোড ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে তার ব্যবসায় ৩ লক্ষ টাকার পুঁজি রয়েছে। প্রতিমাসে আয় হয় ১৫ হাজার টাকার মতো।
আফজালের কর্ম : স্থানীয় কাঠালতলী বাজারে সুনাামের সাথে একটি ফার্মেসীতে গড়ে তুলে সেবা দিচ্ছেন। প্রতিনিয়ত রোগীদের ডিজিটাল প্রেসার মেশিন দিয়ে প্রেসার নির্ণয় করে যাচ্ছেন। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ফার্মেসী সেবা অব্যাহত থাকলেও স্থানীয় মানুষদের জন্য তার সেবা চব্বিশ ঘন্টা রয়েছে বল্লেই চলে। যেকোন সময় প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে মোবাইল ফোনের বাটন টিপে নিমিষেই বিকাশ ও ফ্লেক্সিলোড সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর এমনসব কর্মকান্ডে মুগ্ধ হচ্ছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
আফজালের কথা : শৈশবে বাবাকে হারাই। পরে মায়ের প্রচেষ্ঠায় আমি প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। প্রতিবন্ধি হওয়ায় বিভিন্ন সময় অবহেলার পাত্রে পরিণত হয়েছি। কিন্তুু আমার চেষ্ঠা থেকে আমি সড়ে দাঁড়াই নি। দুই বছর সিলেট জিন্দাবাজারস্থ প্রতিবন্ধি উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছি।
পরিচিতজনদের কথা : সমাজকর্মী ও ব্যবসায়ী হাজী মারুফ আহমেদ বলেন, আফজাল প্রতিবন্ধি হয়েও সমাজের মানুষদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তাঁর ব্যবসাকে আমরা সেবা হিসেবে দেখছি। রাত ১টা হলেও ফোন দিলে ওষুধ পাচ্ছি। এটা এলাকায় একটি দৃষ্টান্ত হয়েছে। স্থানীয় লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক মোঃ গোলাপ মিয়া বলেন, প্রতিবন্ধি হওয়া মানেই সমাজের বোঝা নয়। তারাই সমাজের সম্পদ। প্রতিবন্ধি কোন প্রতিবন্ধকতা নয়, ইচ্ছা শক্তিই আসল। আমাদের সকলের উচিত প্রতিবন্ধীদের ভালো কাজে পাশে দাঁড়ানোর। সে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আজ প্রতিষ্ঠিত হয়ে এলাকায় একটা উদাহরণ স্থাপন করেছে। শুধু শারিরীক প্রতিবন্ধিই নয়, বিকলাঙ্গ একটি হাত দিয়েই সে সাধারণ মানুষের মতোই কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে যা না দেখলে বিশ্বাস করা অসম্ভব। সাংবাদিক এম মছব্বির আলী বলেন, বর্তমান সমাজে প্রতিবন্ধীদের অন্যদৃষ্টি দিয়ে দেখা হয়। কিন্তুু আফজাল তাঁর কর্মযজ্ঞ দিয়ে মানুষের মন জয় করেছে। তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে, প্রতিবন্ধিরাও যে মানুষ এটা কখনো ভূলে গেলে চলবে না।