কুলাউড়ায় আবারো রুহিদাসদের সম্পদ দখলের চেষ্টা !
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৩২:০৭,অপরাহ্ন ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৬২৯ বার পঠিত
ব্রাহ্মণবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মনবাজার চকেরগ্রাম এলাকার মুচি পরিবারকে উচ্ছেদ চেষ্ঠাকারী এম.এ.গণি কলেজের বিরুদ্ধে আদালত স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করিলে সংক্ষুব্ধ এম.এ.গণি কলেজের পক্ষে আপীল দায়ের করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহ আলম সরকার। গত ২২জুলাই ২০১৯ তারিখে তিনি উপরোক্ত আপীল দায়ের করেন। আপীল দায়েরের পরেই গত ৭সেপ্টেম্বর শনিবার এম.এ.গণি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহআলম সরকার, এ.এন.এম.আলম ও খালেদলাকী আদালতের নিষেধাজ্ঞাকৃত ভূমিতে আবারো কলেজের জন্য বাথরুম করার নাম করে বেশ কিছু লোক নিয়ে দখল করতে গেলে রুহিদাস (মুচিদের) সাথে তাদের দাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে কুলাউড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
উল্লেখ্য কুলাউড়ায় আলোচিত রুহিদাস (মুচি)সম্প্রদায়ের সম্পত্তির ভোগ ব্যবহারে কোনরুপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ঠি না করতে এম.এ.গণি কলেজে কর্তৃপক্ষ সহ সমুহ বিবাদীগণের বিপক্ষে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন মৌলভীবাজার সিনিয়র সহকারী জজ আদালত। গত ২জুলাই২০১৯ তারিখ মৌলভীবাজার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের সিনিয়র জজ দেলোয়ার হোসেন উপরোক্ত আদেশ প্রদান করেন এবং ১১জুলাই সিনিয়র সহকারী জজ আদালত কর্তৃক এ সংক্রান্ত নোটিশ জারি করেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়নের চকেরগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি(মুচি) সম্প্রদায়ের মৃত শিবচান রোহিদাস ও লাদুরাম রোহিদাসের ৬৭শতক ভুমি তাদের উত্তোরাধিকারী প্রদিপ রোহিদাস, বাসন্তি রোহিদাস গংদের ভোগ দখলে থাকাবস্থায় গত ১৯/১০/২০১৭ইং তারিখে পার্শবর্তী এম.এ.গণি কলেজের নাম করে স্থানীয় মমদুদ চেয়ার্যানের নেতৃত্বে এ.এন.এম আলম, শাহআলম সরকার, মুছাখাজা, খালেদ লাকি, শামিম আরা বেগম,ছোওয়াব মিয়া, কুলাছুমা বেগম, তাহির মিয়া গংরা জবর দখলের চেষ্ঠায় প্রদিপ রোহিদাসদের বাড়ীতে সশস্ত্র অবস্থায় অতর্কিতে হামলা চালায়। ঘটনায় মুচিবাড়ীর মন্দির ভাংচুর,গাছপালা কর্তন ও লোকজন আহত সহ ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হলেও স্থানীয়দের বাধার মুখে সে যাত্রা জমি বেদখল হতে রক্ষা পায়। ঘটনার প্রেক্ষিতে বাসন্তি রুহিদাস বাদী হয়ে গত ২৩/১০/২০১৭ তারিখে উপরোক্ত ১৭৮/২০১৭(স্বত্ব)মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদী বাসন্তি রুহিদাসের আবেদনের প্রেক্ষিতে সিনিয়র সহকারী জজ আদালত মৌলভীবাজারের সহকারী জজ দেলোয়ার হোসেন উল্লেখিত জায়গার উপর মামলার চুড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাদী পক্ষকে ভ‚মির ভোগ ব্যবহারে কোনরুপ বাধা প্রদান করা যাবেনা মর্মে এম.এ.গণি কলেজের সম্পাদক শাহ আলম সরকারের বিরুদ্ধে দু’তরফা সূত্রে এবং এ.এন.আলম,মুছাখাজা গংদের বিরুদ্ধে এক তরফা সুত্রে নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রদান করেন।
সরেজমিনে জানা যায়, ব্রাহ্মনবাজার এলাকায় সংখ্যালঘু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি হরিজন সম্প্রদায়ের এক দরিদ্র পরিবারকে ভিটে-মাটি ছাড়া করে সর্বস্ব লুটে নিতে বেশ কিছুদিন ধরে উঠেপড়ে লেগেছে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল। স্থানীয় এম.এ.গণি কলেজের বিল্ডিং নির্মান করার নাম করে কলেজের স্থানীয় কয়েক জন শিক্ষক ও গভর্ণিংবডির কয়েক জন সদস্য জড়িত থেকে দীর্ঘদিন থেকে এ অপ-তৎপরতা চালাচ্ছে । নির্যাতিত বিধবা লাখোপতি ও বাসন্তি রুহিদাস গংদের পরিবারের সকল পুরুষলোক পরলোকগত থাকার সুযোগে বিধবা মহিলাদের উপর এ নির্যাতন অনেক দিন যাবত অব্যাহত আছে এবং এ বিষয়ে আদালতে একাধিক মামলাও আছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আদালতে দায়েরকৃত মামলার বিবরণ অনুযায়ী গত ০২ নভেস্বর ২০১৭ তারিখে বাদীনি বাসন্তি রোহিদাসদের মৌরসী বাড়ীটি আবারো দখল করার অশুভ মানসিকতায় আক্রমন করা হলে বাসন্তী রুহিদাস বাদী হয়ে অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মৌলভীবাজারে মামলা নং-২৬০/১৮দায়ে করেন এবং আদালতের নির্দেশে কুলাউড়া থানা পুলিশ বিরোধীয় জায়গার উপর ১৪৪ধারা জারি আছে। এ মামলার আসামীরা হলেন, এম.এ.গণি কলেজের গভর্ণিং বডির সভাপতি গোলাম সরোয়ার পাকিখান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহআলম সরকার, শিক্ষক এ,এন,আলম, কলেজের গভর্ণিং বডির সদস্য খালেদ লাকি, মুছাখাজা, তারা মিয়া, ও কলেজের ডেমোনস্ট্রেটর তারেকুল ইসলাম, রামনারায়ন ও হিরালাল ।
এ বিষয়ে মামলার বাদী বাসন্তি রোহিদাস বলেন, “সভাপতি পাকি খান ,আলম ও শাহ আলমের নেতৃত্বে বিবাদীগণ প্রতিনিয়ত আমাদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে। তারা প্রভাব শালী থাকায় স্থানীয় পুলিশ আমাদের মামলা নেয়না। জেলা পুলিশ সুপারের অফিসে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাইনি। কোর্টে মামলা থাকার পরেও বিবাদীগণ কোন তোয়াক্কা না করে আমাদের শ্মশান পর্যন্ত দখল করার চেষ্ঠা চালাচ্ছে। কুলাউড় থানার দারগা মাসুদ আলম আসামী মুছাখাজার আপন শালা ও আবু ইউছুফ এডিশনাল এসপি কুলাউড়া থানা শাহ আলমের এলাকার লোক হওয়ায় বিগত ৩বছর ধরে কুলাউড়া থানা পুলিশের কোন সহায়তা পাইনি, বরং তাদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছি। আমি প্রশাসনের কাছে সহায় সম্পদ সহ পরিবারের সার্বিক নিরাপত্তা চাই।”
কুলাউড়া থানার দারগা নাজমুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে ফোর্স নিয়ে গিয়েছি। উভয় পক্ষের মধ্যে জায়গা সংক্রান্ত বিরোধে বেশ কিছু মামলা চলমান আছে এবং জায়গাতে বর্তমানে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আমি পক্ষদ্বয়কে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়ে এসেছি।
এম.এ.গণি কলেজের ভারপ্রপ্ত অধ্যক্ষ শাহ আলম সরকারের সাথে মুটোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।