এখনো রহস্যাবৃত টিলাগাওয়ের ‘রণির’ মৃত্যু
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:১০:১০,অপরাহ্ন ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৪৪৩ বার পঠিত
টিলাগাও প্রতিনিধি : মৌলভীবাজার কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও বাজারের ফরহাদ ট্রেডার্সের কর্মচারী রনি শর্মার মৃত্যু রহস্যজনক। দোকান মালিক ফরহাদ তার অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা ও রনির শেয়ারের অংশ ধামাচাপা দিতে গিয়ে তাকে নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে তার পরিবার অভিযোগ। রনির মৃত্যুর পূর্বেও ঘটনা ও তার শারিরিক আঘাতের চিহ্ন দেখে তার মৃর্ত্যুর বিষয় অস্বাভাবিক মনে হয়েছে তার পরিবারের নিকট। এই মৃত্যুকে স্বাবাভিক ভাবে মেনে নিতে পারছে না পরিবার-সহ এলাকাবাসী।
এ ঘটনায় রনির পিতা রঞ্জিত শর্মা গত ৮আগষ্ট মৌলভীবাজার ম্যাজিট্রেট আদালতে ফরহাদ ট্রেডার্সের মালিক ফারহাদুল হক(৪৫) তার ভাই এমদাদুল হক(৩৫) লিটন হক(৩৩) ফরহাদের স্ত্রী শারমিন হকের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামালা দায়ের করেন।
এলাকাবাসী ও মৃত রনি শর্মা পরিবার সূত্রে জানাযায়, রনি শর্মা দীর্ঘ আট বছর ধরে ফরহাদ ট্রেডার্সে চাকুরী করত। প্রথম চার বছর ভালো ভাবে চললেও পরবর্তীতে তাকে দোকানের পাটনার্র করার প্রলোভন দিয়ে ধাপে ধাপে ৫লাখ ৪৫হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। বিভিন্ন চল চাতুরীর মাধ্যমে রণিকে জিম্মি করে রাখে। একদিন দোকান থেকে ২৫হাজার টাকা চুরি হয়ে গিয়েছে বলে আসামী ফরহাদ রণিকে প্রচুর মারধর করে। এই টাকার জন্য রনিকে দায়ী করে বাড়ি থেকে টাকা আনাতে বাধ্য করে। একবার হুন্ডির ব্যবসায়ের ১লাখ ২৫হাজার টাকা ছিনতাই হয়ে গেলে রনি শর্মাকে এই টাকা দেওয়ার জন্য ফরহাদ বাধ্য করে। তার নির্যাতনে রনি শর্মার পিতা কয়েকবার থাকে দোকান থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ফরহাদ থাকে দোকানের হিসাব নিকাশ ও বাকী টাকার অযুহাত দেখিয়ে রনিকে আটকে রাখে। সম্প্রতি ফরহাদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তার ব্যবসার পাটর্না লাভ সহ টাকা ফেরৎ চাওয়ায় এবং অবৈধ ব্যবসা সহ হুন্ডির ব্যবসার তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়ে রনিকে পরিকল্পিত ভাবে শারিরীক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য গত ২আগষ্ট শুক্রবার কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও বাজারের ফরহাদ ট্রেডার্সের কর্মচারী রনি শর্মাকে মুমুর্ষ অবস্থায় কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় কিছু লোকেরা। এ সময় কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এ সময় রনির মাথার পিছনে গভীর ক্ষত হাতের আঙ্গুল গুলো ছিলো থেতলানো। নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিলো। এ ঘটনায় কুলাউড়া থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়।
রনির পিতা রঞ্জিত কুমার শর্মা জানান, “র্দীঘ আট বছর যাবৎ আমার ছেলে ফরহাদের দোকানে চাকুরী করছিলো। প্রথম চার বছর সাড়ে চার হাজার টাকা বেতন দিলেও পরবর্তীতে তাকে দোকানের শেয়ার করবে বলায় ধাপে ধাপে জমি বিক্রি করে সাড়ে ৫লাখ টাকা দেই। টাকা দেওয়ার সময় স্বাক্ষ্যী ছিলো এলাকার আব্দুল জলিল ও রনিকে ফরহাদের দোকানে চাকুরীতে নিয়ে দিয়েছিল অধীর চন্দ্র দেবনাথ। ফরহাদ ট্রেডার্সের মালিক ফারহাদুল হক ব্যবসার পাশা পাশি বিভিন্ন ব্যাংকিং ব্যবসা শুরু করে। এই ব্যবসার আড়ালে সে অবৈধ হুন্ডির ব্যবসা চালিয়ে যায়। বিভিন্ন সময় টাকা চুরি হয়ে যাওয়ার অযুহাত দেখিয়ে আমার ছেলেকে শারিরীক নির্যাতন করত। আমি এই সমস্থ কারনে দোকান থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ফরহাদ আমার ছেলেকে ছেড়ে দিতে চায়নি। এ কারণে আমি ফরহাদের উপর মামলা করার প্রস্তুতি নিয়ে ছিলাম। সেই সময় আব্দুল জলিল. অধীর চন্দ্র দেবনাথ আমাকে বুঝিয়ে মামলা থেকে বিরত করান।”
নিহত রনি শর্মার ভাই পার্থ শর্মা অভিযোগ করে বলেন, “দোকানের মালিক ফরহাদ প্রায় দিন দোকানে টাকার ঘাটতি দেখিয়ে তাকে শারিরীক ভাবে নির্যাতন করত। মৃত্যুও দিন রনির মাথায় আঘাতে চিহ্ন ছিলো। নাক দিয়ে রক্ত বাহির হচ্ছিলো। দু হাতের আঙ্গুল থেতলানো ছিলো। ”এ মৃত্যুর সঠিক তদন্তের দাবী জানান পার্থ শর্মা।
পাশের বাড়ির হাফিজুন নেছা(৪৫) জানান, “রনি খুব শান্ত প্রকৃতির ছেলে। তার শরীরের আঘাতের চিহ্ন থেকে বুঝা যায় তার মৃত্যুর ঘটনা স্বাভাবিক নয়। এটা একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।”
ঐ দিন শিওর ক্যাশ থেকে টাকা তুলতে আশা আলী আমজদ উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী নিশা বলেন, “আমি উপবৃত্তির টাকা তুলতে দোকানে গিয়েছি। তখন রনি ভাই মাথা টেবিলের উপর রেখে চেয়ারে বসে আছেন। এই সময় হাতের আঙ্গুল দিয়ে রক্ত ঝড়ছে দেখেছি। আর বলেছেন উনি মোবাইলের বাটন টিপতে পারবেন না। এই কথা শুনার পর আমরা চলে আসি।”
সূত্র: diptonews.com