পৃথ্বিমপাশায় যৌতুকলোভী ও পরকিয়ায় আসক্ত স্বামীর কর্তৃক স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৫১:৪০,অপরাহ্ন ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ৫১৭ বার পঠিত
সংবাদদাতা, পৃথ্বিমপাশা : মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় মাদক ও পরকিয়ায় আসক্ত যৌতুকলোভী স্বামী গৌছ আলী (৩৫)কর্তৃক ২সন্তানের জননীকে নির্যাতন সন্তান সহ স্বামীগৃহ ছাড়তে বাধ্য করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার পৃথ্বিমপাশা ইউনিয়নের নন্দীরগ্রাম নামক গ্রামে এ মর্মান্তিক নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটি হয়েছে এ বিষয়ে নির্যাতিতা সুমেনা বেগম(২৫) বাদী হয়ে কুলাউড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বাদিনীর মামলার এজাহার ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ০৭বছর আগে মুসলিম শরীয়া মোতাবেক পৃথ্বিমপাশার নন্দীর গ্রামের ওয়াছির আলীর পুত্র বিবাদী গৌছ আলীর সাথে তার বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের ২টি ছেলে সন্তান রয়েছে। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই বাদিনী দেখতে পান তার স্বামী প্রায় রাতে মদ খেয়ে নেশাগ্রস্থ হয়ে ঘরে প্রবেশ করে তাকে গালাগাল শুরু করত। কিছু বললেই বাদিনীকে মারপিট করত।
এক পর্যায়ে বিবাদী গৌছ আলী বাদিনীকে বাবার নিকট হতে টাকা এনে দেবার জন্য চাপ দেওয়া শুরু করে। বাবার দরিদ্র অবস্থা বিবেচনা করে সে টাকা এনে দিতে রাজি না হলে তাকে সে নিয়মিত প্রচুর মারপিট করত। সে তার শশুড় বাড়ীর সকল মুরুব্বিদের বিষয়টি অবগত করলেও কোন লাভ হয়নি। নিরুপায় হয়ে সে তার বাবাকে বিষয়টি অবহিত করলে মেয়ের সুখের জন্য বাবা জমি বিক্রি করে, হালের বলদ বিক্রিকরে, ঘরের ধান বিক্রি করে এমনকি তার মায়ের গহনা বিক্রি করে অন্তত পঞ্চাশেরও অধিকবার বিবাদীকে কে মোট ৫,১০,০০টাকা প্রদান করেন। টাকা শেষ হলেই সে আবার চাপ দিত অন্যতায় প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিত। বাদিনী স্বেচ্চায় টাকার জন্য বাবার বাড়ী যেতে না চাইলে তার চুলের মুষ্ঠি ধরে ঘর হতে বের করে দিত। অথবা কোলের ছেলেকে দু’পা ধরে মাথার উপর তুলে এক আছাড়ে মেরে ফেলার ভয় দেখাত বাদিনী তার সন্তানকে বাঁচানোর জন্য পিত্রালয়ে যেতে রাজি হতো।
অপর দিকে বাদীনির ভাসুর ফুল মিয়া প্রবাসে থাকার সুযোগে বিবাদী গৌছ আলীর সাথে তার জ্যায়ের(ভাসুরের স্ত্রী) পরকিয়া সম্পর্কের বিষয়টি তার নিকট ধরা পড়ে। তার স্বামী প্রতিদিন রাতের খাবার খেয়ে সে ঘর হতে বের হয়ে ভোর বেলা ঘরে ফিরে আসতো। একপর্যায়ে সে তাদের দু’জনকে খারাফ কাজরত অবস্থায় হাতে-নাতে ধরার পর হতে তার উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়।
ইদানিং বিবাদী গৌছ আলী বিদেশ যাওয়ার জন্য বাদীনিকে বাবার বাড়ী হতে বিদেশের জন্য ২লক্ষ টাকা এনে দেওয়ার জোর করে বাবার বাড়ীতে পাঠিয়ে দেয় । তার বাবা টাকা দিতে না পরায় সে প্রাণের ভয়ে স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার সাহস করেনি। বাদীনির বাবা বেশ কয়েকবার স্থানীয় ইউনিয়নের মেম্বার ও মুরব্বি সহ তাদের কাছে গেলেও টাকা ছাড়া তার বাড়ীতে স্ত্রীকে যাওয়ার সুযোগ দেয়নি।
বাদিনীর বাবা বিবাদীর এলাকার বিশিষ্ট মুরুব্বি সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফকে বিষয়টি সমাধান করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করলে তিনি বিবাদীর এলাকার মুরুব্বি মানিক মিয়া ও বিবাদী গৌছ আলীকে বাদীনিকে নেয়ার জন্য পাঠালে তার বাবা মেয়েকে তাদের সাথে পাটিয়ে দেন। এর একদিন পর ০৯/০৮/ ২০১৯ তারিখে রাতের বেলা বিবাদী দা নিয়ে বাদিনীর বুকের উপরে উঠে জবাই করে হত্যার চেষ্ঠা করে। বিবাদীর আর্ত চিৎকারে সারা বাড়ীর লোক জেগে উঠেন। এক পর্যায়ে সে কোন রকমে প্রান নিয়ে ঘরের বাহিরে বের হয়ে নিজেকে রক্ষা করে।
১৬/০৮/২০১৯ তারিখে বিবাদী আবারো বাদিনীকে প্রচুর মারপিট করে অচেতন করে বাড়ীর বাহিরে ফেলে রাখলে খবর পেয়ে লতিফ চেয়ারম্যান ও এলাকার মুরব্বীগণ বাদিনীকে সিএনজি গাড়ী দিয়ে কুলাউড়া হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
মামলার বাদিনী সুমেনা বেগম বলেন, “এলাকার মুরব্বিয়ানদের সহযোগিতা না পেলে বিবাদীর কবল হতে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারতামনা।”
এবিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দারগা বাদল বলেন, প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। বিবাদী পলাতক রয়েছে। তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পৃথ্বিমপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নবাব আলী বাখর খান হাসনাইন জানান, বিবাদীর বাবা গৌছ আলী বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। মামলার বিষয়টিও জেনেছি। শীঘ্রই উভয় পক্ষকে ডেকে বিরোধ নিষ্পপত্তির একটি উদ্যোগ গ্রহন করব।
বিবাদী গৌছ আলীর সাথে মোঠো ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্ঠা করা হলেও তার মেবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।