মামাতো ভাইকে টাকা ধার দেয়ার পুরষ্কার-‘ধর্ষন মামলায় হাজতবাস’
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৫৬:১৬,অপরাহ্ন ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ১৩০১ বার পঠিত
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মামাতো ভাইয়ের কাছে পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ায় মামাতো বোনের ধর্ষন মামলার আসামী হয়ে হাজত কাটতে হচ্ছে ফুফাতো ভাইকে। মামলার স্বীকার উপজেলার ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়ন শ্রমিক লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ হেলাল(২৫) কে ধর্ষন মামলায় গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে কুলাউড়া থানা পুলিশ। জানা গেছে মামলার আসামী শাহ হেলালের মামাতো বোন ধর্ষনের স্বীকার হয়েছেন বলে দাবী করে ৯সেপ্টেম্বর সোমবার দিবাগত রাত ২.০০টর সময় হেলালকে আসামী করে কুলাউড়া থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
শাহ হেলালের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের উত্তর রাউৎগাঁও(একরামনগর) এলাকার মঞ্জিল মিয়ার ছেলে জুবেল মিয়া(৩৫) মধ্য প্রাচ্য হতে আমেরিকা যাওয়ার প্রয়োজনে ৩বছর আগে ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়নের শ্রীপুর (কুনাগাঁও) এলাকার ফুফাতো ভাই ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়ন শ্রমিক লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ হেলাল এর নিকট হতে ৯লক্ষ টাকা ধার নেয়। বেশ কিছুদিন যাবত শাহ হেলাল তার পাওনা টাকার জন্য মামাতো ভাই জুবেল মিয়া ও তার পরিবারকে চাপ দিচ্ছিল কিন্তু নানা অজুহাতে জুবেলের পরিবার টাকা দিব-দিচ্ছি বলে কালক্ষেপন করছিল। ০৯ সেপ্টেম্বর সকালে মুটোফোনে জুবেলের সাথে পাওনা টাকা নিয়ে হেলালের প্রচন্ড কথা কাটাকাটি হয়। ঐদিন দিবাগত রাতেই জুবেলের কলেজে পড়–য়া বোন বাদী হয়ে কুলাউড়া থানায় হেলালের বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কলেজ পড়ুয়া ওই তরুণী মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ কেেেন্দ্র তাঁর সমাজ বিজ্ঞান অনার্স বিষয়ে প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। ঘটনার দিন ৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে পরীক্ষা শেষে তিনি কলেজের সামনে দাড়ালে একপর্যায়ে তাঁর ফুপাতো ভাই শাহ হেলাল মোটর সাইকেল যোগে সেখানে গিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে তাঁকে মোটর সাইকেলে তোলে এবং ব্রাহ্মনবাজারস্থ তার নির্মাণাধীন একটি ভবনের ভেতরে বাদীনিকে নিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। বাদীনি বাড়ি পৌঁছে স্বজনদের বিষয়টি জানালে ওই দিন দিবাগত রাত ২টার সময় বাদীনি নিজে বাদী হয়ে উক্ত মামলাটি দায়ের করেন। তাছাড়া বাদিনী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন ঐদিন তার সমাজবিজ্ঞান অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা দিতেই তিনি মৌলভীবাজার গিয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় বিশ^াবিদ্যালয় অনার্স ১ম বর্ষের রুটিন অনুযায়ী ঘটনার দিন সমাজবিজ্ঞান অনার্স ১ম বর্ষের কোন পরীক্ষাই ছিলনা ।
মামলার আসামী ও বাদিনীর নির্ভরযোগ্য ঘনিষ্টজন সূত্রে জানা গেছে, আসামী হেলালের সাথে বাদীনির দীর্ঘদিনের প্রণয় চলমান ছিল এবং তাদের সম্পর্কের বিষয়ে উভয় পরিবার জ্ঞাত ছিলো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মামলার বাদিনীর ঘণিষ্ঠজনদের একজন জানিয়েছেন, হেলালের বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলা পারিবারিক চাপে পড়েই তাকে করতে হয়েছে।
আসামী শাহ হেলালের ভাই শাহ বেলাল বলেন, “আমাদের পাওনা টাকা আত্মসাৎ করার জন্যই জুবেল তার বোনকে আমার ভাইয়ের পিছনে লেলিয়ে দিয়ে এখন ধর্ষনের মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই নয় , জুবেলের ভাই জুয়েল ও রুয়েল আমাদের আরো বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাসানোর হুমকি প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছে।”
মামলার তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আদালত কর্তৃক আসামী হেলালের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার প্রেক্ষিতে তাকে রিমান্ড শেষে আবারো আদালতে পাঠানো হয়েছে।’ রিমান্ড প্রতিবদেনে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামী গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে এবং তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। তবে ধর্ষনের বিষয়টি স্বীকার বা অস্বীকার সে বিষয়ে কোন তথ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
অপরদিকে মামলার বাদীনী কুলাউড়া থানায় দায়েরকৃত এজাহারে প্রদত্ত মোবাইল নম্বরে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করা হলেও মোবাইল বন্ধ থাকায় বাদিনীর কোন বক্তব্য গ্রহন করা সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে, ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়ন শ্রমিক লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ হেলাল এর বিরুদ্ধে মামাতো বোন ধর্ষনের অভিযোগ এনে মামলা দায়েরের তিব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন অভিযুক্ত শ্রমিকলীগ নেতা শাহ হেলালের পরিবার, ব্রাহ্মনবাজরের বিশিষ্ট রাজনৈতিক গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও শুভাকাঙ্কীরা। তারা শ্রমিকলীগ নেতা শাহ হেলারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অভিলম্বে প্রত্যাহারেরও দাবী জানান। প্রতিবাদকারীগণ বিভিন্ন সামাজিক গনমাধ্যমে শতশত পোস্টের মাধ্যমে একটি মহল কর্তৃক হেলাল ও তাঁর পরিবারের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে তাদের ঐতিহ্যবাহী পরিবারের বিরুদ্ধে উদ্দেশমূলক অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন । প্রতিবাদ ও নিন্দাজ্ঞাপন কারীদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজন হচ্ছেন, ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়ন আওয়ামিলীগ সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান শাহিন, কুলাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নিয়াজুল তায়েফ, শ্রমিকলীগ নেতা এডভোকেট আনোয়ার আলম, ব্রাহ্মনবাজার ইউনিয়ন শ্রমিকলীগ যুগ্ম আহŸায়ক শিপু আহমদ, সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান জুনু, আব্দুল আহাদ জিহাদি, ইঞ্জিনিয়ার রিপন, এনামুল হাসান দেলোয়ার, সোহেল সালাহ, সৈয়দ কামরুল হোসাইন,এস আর জীবন, মোহাম্মদ সাইফুর রহমান, মোঃ আলামিন, আহমেদ সজিব, মোঃ রুহুল আমিন, মোঃ পারভেজ, নাজমুল ইসলাম, তানভীর আহমদ, এম এইচ হোসেন, আহমেদ কাওসার সহ অসংখ্য সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহারকারী।