আত্মসাৎকারীর ছেলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ায় তিনি স্থানীয় বিচার শালিস কোন কিছুকেই পাত্তা দিচ্ছেননা।
বিশেষ প্রতিনিধি : মৌলবীবাজার জেলার কুলাউড়া পৌরশহরের চাতলগাাঁও এলাকার মুহিম খান নামক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রতিবেশী রউফ আহমদ শিবলু নামক অপর ব্যবসায়ীর নিকট হতে প্রতারনা করে ২০ লাখ টাকা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ব্যবসায়ী রউফ আহমদ শিবলু তার প্রতিবেশী মুহিমখানের বিরুদ্ধে উপরোক্ত অভিযোগ করেছেন। জানা গেছে, অভিযুক্ত মুহিম খান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সাঈদ খান শাওনের পিতা।
৩০ সেপ্টেম্বর বিকেলে কুলাউড়া পৌরসভার হলরুমে আয়োজতি সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রউফ আহমদ শিবলু বলেন, তিনি মৌলভীবাজার জেলা নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন কুলাউড়া উপজেলা শাখার কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দীর্ঘদিন থেকে ঠিকাদারী ব্যবসার সাথে জড়িত।
তাঁর প্রতিবেশী কুলাউড়া উপজেলার চাতলগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মৃত মনোহর খানের ছেলে মোঃ মুহিম খান ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগে পার্টনারশিপে একটি ইটভাটার কাজ শুরু করার সময় ইট দেয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে নগদ ২২ লাখ টাকা ও তার বন্ধুদের কাছ থেকে আরো ৬ লাখ টাকা নেন। ইটের মেমো তৈরী না হওয়ায় তিনি ষ্টাম্পে এফিডেভিট এর মাধ্যমে তার সাথে একটি চুক্তিনামা সম্পাদন করেন। মেমো তৈরী হলে পরবর্তীতে তাকে মেমো দেয়ার কথা থাকলেও মেমো কিংবা কোন ইট না দেয়ায় মুহিম খানের সাথে তাঁর বিরোধ সৃষ্টি হয়।
শিবলু তাঁর লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করেন, এক পর্যায়ে মুহিম খান দক্ষিণভাগ থেকে ইটের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলেন। তখন টাকা নিয়ে অভিযোগকারী শিবলু ও তার বন্ধুদের সাথে মুহিম খানের ঝগড়া চলতে থাকলে তিনি সাড়ে ৫ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে সাময়িক ভাবে তাদের কে নিবৃত করেন।। পরবর্তিতে আর কোন টাকা না দেয়ায় এ নিয়ে দফায় দফায় উভয়ের মধ্যে বৈঠক অনুষ্টিত হয়। কুলাউড়ার বিশিষ্ট গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্টিত বৈঠক গুলোতে শিবলুর ২০ লাখ ৩০ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার রায় প্রদান ও অভিযুক্ত মুহিম খান উক্ত রায় মানার মৌখিক প্রতিশ্রতি দিলেও পরবর্তিতে কোন টাকা না দেয়ায় গত রমজানের ঈদের আগে কুলাউড়া শহরে পাওনা টাকা নিয়ে দু‘জনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। সে সময় মহিম খান ঈদের পরে শিবলুকে টাকা দিবেন বলে আশ্বস্থ করেন।
ঈদের পরদিন বিকেলে মুহিম খান ও তার দুই ছেলে সাঈদ খান শাওন (কেন্দ্রীয় ছাত্রীগের সহ-সম্পাদক) ও নাঈদ খান নয়ন মোটর সাইকেল যোগে কোথাও যাওয়ার সময় তাদের সাথে অভিযোগকারী শিবলুর আকষ্মিক দেখা হয়। তখন মোটর সাইকেল থামিয়ে মুহিম খানের ছেলে সাঈদ খান শাওন হুমকি দিয়ে বলে , “আমার আব্বার সাথে টাকা নিয়ে আর বাড়াবাড়ি করলে ৬৪ জেলায় তোর নামে মামলা দিয়ে ঘরে থাকা হারাম করে দেব।” পুলিশ ও ছাত্রলীগ দিয়ে পিটিয়ে হাড় গুড়ো, গুম ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। ওই দিন রাতেই শিবলুর হার্টঅ্যাটাক হয়। সে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে বাড়ীতে এসে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে।
রউফ আহমদ শিবলু নিরুপায় হয়ে উত্তর চাতল গাঁও জামে মসজিদের পঞ্চায়েতের কাছে বিচার প্রার্থী হলে গত ৩০ আগষ্ট শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর পঞ্চায়েত প্রধান মোঃ ইসহাক আলীর বাড়ীতে এ নিয়ে এক বিচার অনুষ্টিত হয়। উক্ত বিচারে মুহিম খান ও তাঁর দুই ছেলে নয়ন ও শোভন উপস্থিত ছিলো। মুহিম খানের স্বীকারোক্তি মতো বিচারের সিদ্ধান্ত হয় শিবলুর পাওনা ২০ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা অথবা উক্ত টাকার সমপরিমান ২০ শতক জমি শিবলুকে দেয়ার। মুহিম খান পঞ্চায়েতের কাছে একদিনের সময় চেয়ে চলে যান। পরবর্তীতে তিনি আর পঞ্চায়েতের ডাকে সাড়া না দেয়ায় গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ তাহির মিয়ার বাড়িতে মসজিদের মোতাওয়াল্লী মোঃ ইসহাক আলীর সভাপতিত্বে পঞ্চায়েতের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। পঞ্চায়েতের ডাকে সাড়া না দেয়া ও পঞ্চয়েতের রায় না মানার কারণে উক্ত সভায় উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে মোঃ মুহিম খানকে পঞ্চায়েতের সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। মুহিম খানের ছেলের মামলা হামলার হুমকিতে অভিযোগকারী শিবলু বর্তমানে ভয়ে তটস্থ ও চরম নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন।
এবিষয়ে অভিযুক্ত মুহিম খানের ছেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সাইদ খান শাওন সাংবাদিকদের জানান, ‘রউফ আহমদ শিবলুর সাথে আমার বাবার ব্যবসায়িক লেনদেন রয়েছে। তবে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে যে সব অভিযোগ করেছেন তা সত্য নয়। আমি সংবাদ সম্মেণন করে বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরব।’
অভিযুক্ত মুহিম খান এর কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায় করতে ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনসহ সমাজের সকল স্তরের বিবেকবান মানুষের সাহায্য কামনা করেছেন সংবাদ সম্মেলনকারী রউফ আহমদশিবলু।
সংবাদ সম্মেলনে পঞ্চায়েত প্রধান মোঃ ইসহাক আলী, প্রবীন মুরব্বি মোঃ আরজ খান. হাবিব খান, সাবেক ইউপি সদস্য আবু তাহের, পঞ্চায়েত সদস্য মোঃ খালিক মিয়া, লেবু মিয়া, মোবারক আলী সহ এলাকার গন্যমান্য অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।