১৯৫৭ সালে রাশিয়ার স্পুটনিক উৎক্ষেপণের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো চাঁদে যাওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এরপর ১৯৬৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অ্যাপোলো-১১ অভিযানের মাধ্যমে চাঁদে প্রথমবারের মতো মানুষ পাঠায়। এই প্রতিযোগিতা আবারও নতুন করে শুরু হয়েছে এই দশকে।
গত প্রায় দেড় বছরে বিভিন্ন দেশ নতুন করে চাঁদে অভিযানের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এর ধারাবাহিকতায়, ভবিষ্যতে চাঁদে ঘাঁটি নির্মাণের লক্ষ্যে চীনা গবেষকরা সম্প্রতি ‘লুনার ব্রিকস’ বা চন্দ্র ইট তৈরি করেছেন। তাদের দাবি, এই ইটের উপাদান ও গঠন চাঁদের মাটির মতোই।
‘হুয়াজং ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ (এইচইউএসটি)-এর গবেষক ডিং লিয়ুনের নেতৃত্বে একটি দল এই চন্দ্র ইট তৈরি করেন। তারা চাঁদের মাটির মতোই সিমুলেটেড উপাদান ব্যবহার করে ইট বানিয়েছেন, যা প্রচলিত লাল ইট বা কংক্রিটের ইটের তুলনায় তিনগুণ মজবুত।
গবেষক দলটি অ্যাডিটিভ ম্যানুফ্যাকচারিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরেকটি নির্মাণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এই পদ্ধতিতে চাঁদের মাটি ব্যবহার করে একটি থ্রিডি প্রিন্টিং রোবটের মাধ্যমে ঘর প্রিন্ট করা সম্ভব হবে।
এইচইউএসটি-এর অধ্যাপক ঝো চেং জানিয়েছেন, চন্দ্র ইট তৈরিতে পাঁচটি ভিন্ন ধরনের সিমুলেটেড এবং তিনটি ভিন্ন সিন্টারিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে চাঁদে ঘাঁটি নির্মাণের উপযুক্ত উপাদান বেছে নিতে সহায়ক হবে।
সিন্টারিং প্রক্রিয়া হল এমন একটি পদ্ধতি যেখানে পাউডারজাতীয় পদার্থকে উচ্চ তাপ বা চাপের মাধ্যমে শক্ত করা হয়, তবে গলানো হয় না।
গবেষকরা চাঁদের বিভিন্ন স্থানের মাটির গঠন অনুকরণ করে এই ইট তৈরি করেছেন। বিশেষ করে, চ্যাং’ই-৫ মহাকাশযান যেখানে অবতরণ করেছে, সেই স্থানের মাটি অনুকরণ করেই চন্দ্র ইট তৈরি করা হয়েছে, যা মূলত আগ্নেয়গিরিজাত শিলা বা ব্যাসল্ট।
তবে চন্দ্র ইটগুলোকে চাঁদের চরম আবহাওয়ার এবং মহাজাগতিক বিকিরণ সহ্য করতে পারবে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য আরও পরীক্ষা করতে হবে। চাঁদের তাপমাত্রা দিনে ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায় এবং রাতে মাইনাস ১৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে আসে, তাই ইটগুলোর তাপ নিরোধক ক্ষমতা এবং বিকিরণ সহ্য করার ক্ষমতা পরীক্ষা করা হবে।
গবেষকরা তাদের তৈরি চন্দ্র ইটগুলিকে চীনের মহাকাশ স্টেশনে পাঠাবেন, যাতে সেগুলোর যান্ত্রিক ও তাপ সহ্য ক্ষমতা পরীক্ষা করা যায়। আশা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ এই ইটগুলো চাঁদে পাঠানো সম্ভব হবে।
চীন সম্প্রতি মহাকাশ বিজ্ঞানে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে, যেখানে ২০৫০ সালের মধ্যে মহাকাশ উন্নয়নের একটি রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, চীনের নেতৃত্বে গঠিত আন্তর্জাতিক চাঁদ গবেষণা কেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ ২০২৮ থেকে ২০৩৫ সালের মধ্যে শুরু হবে।