অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত এক মাসে সাতটি দুর্বল ব্যাংককে ৬ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে সবল ১০টি ব্যাংক। তবে এই সহায়তা দুর্বল ব্যাংকগুলোর চাহিদার তুলনায় কম এবং তাতে তাদের আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার সমস্যা সমাধান হয়নি। কিছু ব্যাংক অতিরিক্ত তারল্য থাকা সত্ত্বেও ধার দিতে আগ্রহী নয়, ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর অন্যান্য ব্যাংকগুলোকে আরও সহায়তা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা জানিয়েছেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আরও অর্থ সহায়তা দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকারদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক যে পদ্ধতিতে সহায়তা দিয়েছে তা যথেষ্ট নয়। তাদের মতে, তারল্য সহায়তা বৃদ্ধি না পেলে গ্রাহকদের আস্থা আরও কমে যাবে এবং ব্যাংকগুলোর শাখায় অনেক সময় গ্রাহকরা টাকা পাচ্ছেন না, যা কর্মকর্তাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে।
“বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এসব দুর্বল ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ২ হাজার ৯৫ কোটি টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক ৯২০ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংক ৭০০ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক ৪০০ কোটি টাকা এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ২৯৫ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে।”
সবচেয়ে বেশি সহায়তা পেয়েছে সোনালী ব্যাংক, ৩ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া সিটি ব্যাংক ১ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, পূবালী ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ৪০০ কোটি টাকা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ৪০০ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক ৩০০ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংক ২৫০ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ২২০ কোটি টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা এবং বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ২০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর তারল্য সংকটে থাকা ৯টি ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে একটি বৈঠক করবেন। এই বৈঠকে ব্যাংকগুলোর নতুন বোর্ডের কার্যক্রম এবং তাদের আর্থিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হবে।
একাধিক ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি ও অনিয়মের কারণে গত দুই বছর ধরে তীব্র তারল্য সংকটে রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআরআর ও এসএলআর রক্ষণাবেক্ষণে ব্যর্থ হয়। বর্তমান গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এসব ব্যাংককে সুবিধা দেওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ফলে তাদের আর্থিক চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এছাড়া চলতি বছরের আগস্ট শেষে দেখা গেছে, অন্তত ৯টি ব্যাংক ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি চলতি হিসাব ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সবচেয়ে বেশি, ৭ হাজার ২৬৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ঘাটতি রয়েছে।