ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বুধবার বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতকালে জানিয়েছেন যে, তিনি আগামী দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশ সফরে আসার পরিকল্পনা করছেন। বাংলাদেশের নারীদের ফুটবলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য ফিফা আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে ইচ্ছুক।
এ সভা অনুষ্ঠিত হয় দাভোসে, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের সময়, যেখানে ইনফান্তিনো ড. ইউনূসের কার্বন-নিরপেক্ষ ক্রীড়া উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল উন্নয়নে ফিফার সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন। ইনফান্তিনো বলেন, “আমি আগামী দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশে সফর করতে চাই।”
ড. ইউনূসের অনুরোধে, বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের জন্য ডরমিটরি ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা প্রদানের কথা জানিয়ে ইনফান্তিনো বলেন, “ফিফা বাংলাদেশে নারী ফুটবলের উন্নয়নে অর্থায়ন করতে প্রস্তুত।”
এছাড়া, সৌদি আরবে নারী ফুটবলের উন্নয়নেও ফিফা সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে এবং সৌদি আরবের বাংলাদেশি প্রবাসীরা এই উদ্যোগ থেকে উপকৃত হবেন বলে ইনফান্তিনো উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে যুব উৎসব চলছে, যা বিপিএল উপলক্ষে শুরু করা হয়েছে। ইনফান্তিনোকে এই উৎসবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, কিন্তু তিনি উপস্থিত হতে পারেননি, এজন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
এর আগে তিনি ২০২০ সালে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন, যা দেশের ফুটবলের উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করেছিল।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন দীর্ঘদিন ধরেই দেশের ফুটবলের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে। সেই ধারাবাহিকতায় ফিফা সভাপতির এই সফর নতুন মাত্রা যোগ করবে। ইনফান্তিনোর এই সফরকে ঘিরে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে আগ্রহ ও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সফরের মাধ্যমে দেশের ফুটবলে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোতে ফিফার সহযোগিতা আরও জোরদার হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ফুটবলে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। জাতীয় দল থেকে শুরু করে ঘরোয়া ফুটবল লিগেও উন্নতির ছাপ দেখা গেছে। তৃণমূল পর্যায় থেকে খেলোয়াড় তৈরি এবং দেশের ফুটবলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ফিফার সহযোগিতায় এগুলো আরও সফলভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে।
ফিফা সভাপতির সফরে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
১. বাফুফে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক, যেখানে দেশের ফুটবলের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হবে।
২. দেশের ফুটবল একাডেমি এবং তৃণমূল প্রকল্প পরিদর্শন।
৩. নারী ফুটবলের উন্নয়ন এবং খেলোয়াড়দের জন্য নতুন সুযোগ তৈরিতে আলোচনা।
৪. সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, যেখানে দেশের ক্রীড়ানীতিতে ফুটবলের অগ্রাধিকার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের সাম্প্রতিক সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে বাফুফে এবং ফিফার সহযোগিতা। ইনফান্তিনোর সফরে নারী ফুটবলের উন্নয়ন নিয়ে বিশেষ আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ফিফার কাছ থেকে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য সহায়তা পেয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কোচিং প্রশিক্ষণ, রেফারিং সিস্টেম উন্নয়ন এবং খেলোয়াড়দের জন্য সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে ফিফার অবদান উল্লেখযোগ্য। ইনফান্তিনোর এই সফর এসব সহযোগিতাকে আরও সম্প্রসারিত করতে পারে।
ফিফা সভাপতির সফরকে ঘিরে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা আশা করছেন, এই সফরের ফলে দেশের ফুটবলের আরও উন্নয়ন হবে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হবে।
বাংলাদেশের ফুটবলকে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে উন্নত করতে হলে পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। ফিফা সভাপতির এই সফর দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন প্রকল্পে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবলের প্রসারে এবং জাতীয় পর্যায়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের গড়ে তুলতে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর এই সফর বাংলাদেশের ফুটবলে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশের ফুটবলে যে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখা যাচ্ছে, তা পূরণে ফিফার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা অপরিহার্য। এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের ফুটবল এক নতুন গতি পাবে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের প্রতিনিধিত্ব আরও শক্তিশালী করবে।