প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বিতরণের পাঠ্যবই খোলাবাজারে বিক্রি ও মজুত করার অপরাধে একটি সক্রিয় চক্রের দুই সদস্যকে আটক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এ সময় দুই ট্রাক ভর্তি বই জব্দ করা হয়েছে। বুধবার রাজধানীর সূত্রাপুরের বাংলাবাজার ইস্পাহানি গলিতে বিভিন্ন গোডাউনে অভিযান চালিয়ে বইগুলো জব্দ এবং অভিযুক্তদের আটক করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি দক্ষিণের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
আটককৃতরা হলেন সিরাজুল ইসলাম উজ্জ্বল (৫৫) এবং মো. দেলোয়ার হোসেন (৫৬)। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে বিতরণের বই অবৈধভাবে মজুত করে তা বাজারে বিক্রি করছিল।
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, বিনামূল্যে বিতরণের বই অবৈধভাবে মজুত করার মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে—এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের কোতয়ালী জোনাল টিম বাংলাবাজার এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির বিভিন্ন বিষয়ের প্রায় ১০ হাজার পাঠ্যবই উদ্ধার করা হয়।
ডিবি কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, আটককৃতরা তাদের স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছে, বছরের শুরুতে সরকার বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন পাঠ্যপুস্তক বিতরণে যেসব উদ্যোগ নেয়, সেগুলো নস্যাৎ করার উদ্দেশ্যে তারা এই বইগুলো মজুত করেছিল। অবৈধভাবে মজুত করা বইগুলো বাজারে বিক্রি করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছিল।
এই চক্র বছরের শুরুতে সরকারের বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রমকে ব্যাহত করার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের এবং অভিভাবকদের বইয়ের অভাবের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে আর্থিক সুবিধা আদায় করার অপচেষ্টা চালাচ্ছিল। তাদের এমন কার্যক্রম শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করার পাশাপাশি সরকারের উদ্যোগের প্রতি অবিশ্বাস তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ডিবি সূত্রে আরও জানা যায়, চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত করতে এবং তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চক্রটির অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিবি কর্মকর্তারা।
প্রতি বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। কিন্তু কিছু অসাধু চক্রের কারণে এ উদ্যোগ ব্যাহত হতে পারে। এমন ঘটনায় জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে কঠোর ভূমিকা রাখছে, যাতে শিক্ষার্থীরা সময়মতো পাঠ্যবই পেতে পারে এবং শিক্ষার পরিবেশ অক্ষুণ্ণ থাকে।
এই ধরনের অপরাধ বন্ধে নাগরিকদের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কেউ বিনামূল্যে বিতরণের পাঠ্যবই বিক্রির প্রমাণ পান, তবে তা দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে হবে। এর মাধ্যমে কেবলমাত্র এই চক্রের কার্যক্রম বন্ধ করাই সম্ভব নয়, শিক্ষাব্যবস্থাকে সঠিক পথে পরিচালিত করাও সম্ভব হবে।
সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে তারা এই ধরনের চক্রের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নেয় এবং তাদের কার্যক্রম বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে।