নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাথে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) সাথে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে চুক্তি অনুসারে তথ্য তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর, বিনিময়, বিক্রয় বা অন্য কোনোভাবে প্রদান নিষিদ্ধ থাকলেও বিসিসি তা লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর।
তিনি জানান, ২০২২ সালের ৪ অক্টোবর বিসিসির সাথে নির্বাচন কমিশনের তথ্য যাচাইয়ের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, বিসিসি কোনো অবস্থায়ই নির্বাচন কমিশনের তথ্য তৃতীয় পক্ষের কাছে সরবরাহ করতে পারবে না। তবে অভিযোগ রয়েছে, বিসিসি এ শর্ত মানেনি এবং আইন ভঙ্গ করে তথ্য সরবরাহ করেছে।
২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বিসিসির কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হলে তারা কোনো সাড়া দেয়নি। পরবর্তীতে ৬ অক্টোবর তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব প্রদানের জন্য বলা হলে বিসিসির জবাব ইসির কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। এছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রযোজ্য ফি/চার্জ পরিশোধ না করায় চুক্তিটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে চুক্তি বাতিল করা হয় এবং বিসিসির এপিআই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
এদিকে, জানা যায় যে, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডার থেকে প্রায় ৫ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এই বিক্রয়ের জন্য ‘পরিচয়’ নামে একটি প্ল্যাটফরম ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিসিসির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ করে। এ প্রক্রিয়ায় আইন লঙ্ঘন করে তথ্য বিক্রয় এবং ব্যবহার করা হয়েছে।
তথ্য বিক্রির বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের গোপনীয়তার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। একজন ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র বা মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তার পুরো পরিবারের তথ্য বের করা সম্ভব হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, বিসিসি এপিআই ব্যবহার করে ১৫ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেছে, যা পরবর্তীতে ডাউনলোড বা পৃথক তথ্যভান্ডার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন এখনো বিসিসির এই কার্যক্রমের সম্পূর্ণ তথ্যভান্ডারের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্য বা সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা কোনো সুনির্দিষ্ট মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। একইসাথে, আইন ও বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে।