গাজার জনগণকে স্থায়ীভাবে অন্য কোথাও পুনর্বাসনের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি রিয়াদ মানসুর। তিনি বলেছেন, বিশ্ব নেতাদের উচিত ফিলিস্তিনিদের গাজায় থাকার অধিকারকে সম্মান করা।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
রিয়াদ মানসুর বলেন, “আমাদের মাতৃভূমি আমাদেরই। যদি গাজার মতো একটি অংশ ধ্বংসও হয়ে যায়, তবুও ফিলিস্তিনি জনগণ সেখানে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি মনে করি, বিশ্ব নেতাদের এই ইচ্ছাকে সম্মান করা উচিত।”
এর আগে, মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করেন ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত, কারণ ইসরাইলি হামলার ফলে অঞ্চলটি ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।
ট্রাম্প আরও বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র গাজা দখল করতে চায় এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে পুনর্বাসন করে সেখানে নতুনভাবে অঞ্চলটি গড়ে তুলবে। পরবর্তীতে এটি বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।”
জাতিসংঘে দেওয়া বক্তব্যে মানসুর ট্রাম্পের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও তার প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের ভূমি, আমাদের বাড়ি—গাজা স্ট্রিপ ফিলিস্তিনের অংশ। আমাদের আর কোনো দেশ নেই। যারা আমাদের অন্য কোথাও পুনর্বাসন করতে চায়, তাদের উচিত আমাদের আসল বাড়িতে, অর্থাৎ ইসরাইলের ভেতরের পুরোনো জায়গায় ফিরতে দেওয়া। সেসব জায়গা সুন্দর এবং আমরা সেখানেই ফিরতে চাই।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরাইলে ১,২১০ জন নিহত হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৪৭ হাজার ৫১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ, বলে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। জাতিসংঘও এই সংখ্যাকে “বিশ্বাসযোগ্য” বলে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ইসরাইলি অভিযানে গাজার ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ—প্রায় ১৯ লাখ—বাস্তুহারা হয়েছে। বিমান হামলায় স্কুল, হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে।
গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের পর থেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মরদেহ প্রতিদিনই উদ্ধার করা হচ্ছে। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পর বহু ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করেছেন, তবে তাদের অনেকের ঘরবাড়ি আগের মতো নেই।
জাতিসংঘ দূত রিয়াদ মানসুর বলেন, “মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৪ লাখ ফিলিস্তিনি হেঁটে গাজার উত্তর অংশে ফিরে গেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “ফিলিস্তিনি জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান করা উচিত। শেষ পর্যন্ত তারাই নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।”