শিরোনাম

নেতানিয়াহুর হুঁশিয়ারি: গাজায় ফের যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১ দিন আগে

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় ফের যুদ্ধ শুরুর হুমকি দিয়েছেন। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস আটক জিম্মিদের মুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার পর এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নেতানিয়াহু বলেন, হামাস পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনী লড়াই চালিয়ে যাবে।

নেতানিয়াহুর কড়া বার্তা

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে, যদি শনিবারের মধ্যে হামাস গাজায় আটক থাকা ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি না দেয়, তবে ইসরাইল যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবারও হামলা শুরু করবে।

নেতানিয়াহু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বলেন, “যদি ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমাদের জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া না হয়, তাহলে যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে যাবে। হামাস পুরোপুরি পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনী লড়াই চালিয়ে যাবে।”

যুদ্ধবিরতি চুক্তি ও বর্তমান পরিস্থিতি

গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় ১৯ জানুয়ারি। তিন ধাপের এই চুক্তির আওতায় বন্দি বিনিময়, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনীর প্রত্যাহারের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে ইসরাইল এই চুক্তির মূল শর্ত লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে হামাস। হামাস জানিয়েছে, ইসরাইলের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে অবহেলা করা হয়েছে, যা তাদের জন্য অগ্রহণযোগ্য। ফলে গাজায় আটক থাকা বন্দিদের মুক্তি আপাতত স্থগিত করেছে তারা।

হামাসের প্রতিক্রিয়া

হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবেইদা এক বিবৃতিতে জানান, “শত্রুপক্ষ যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। ইসরাইল তার বাধ্যবাধকতা ঠিকভাবে পালন না করলে বন্দি বিনিময়ের দরজা খোলা থাকবে না।”

হামাসের অভিযোগ, ইসরাইল মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করছে, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি রাখছে না এবং গাজা উপত্যকার বাস্তুচ্যুত মানুষদের প্রত্যাবর্তনে বিলম্ব করছে।

যুদ্ধবিরতির অধীনে বন্দি বিনিময়

চলমান চুক্তির আওতায় এখন পর্যন্ত হামাস ২১ ইসরাইলি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। বিনিময়ে ইসরাইলি কারাগার থেকে ৫৬৬ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তিন সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে মোট ৩৩ বন্দির মুক্তি এবং ১৯০০ বন্দির বিনিময়ের কথা ছিল। তবে ইসরাইল দাবি করেছে, এই ৩৩ বন্দির মধ্যে আটজন মারা গেছেন।

গাজার মানবিক সংকট

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাস ইসরাইলে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছিল। তখন হামাস ২৫১ জনকে আটক করেছিল। জবাবে ইসরাইল গাজায় ব্যাপক সামরিক হামলা চালায়। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

গাজায় চলমান সংঘাত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি যদি আরও উত্তেজনার দিকে যায়, তবে গাজায় মানবিক সংকট আরও প্রকট হবে।

পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে?

ইসরাইলের হুঁশিয়ারি এবং হামাসের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার ফলে গাজায় নতুন করে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইসরাইল হামাসকে সম্পূর্ণভাবে দমন করতে চায়। অন্যদিকে হামাসও তার অবস্থানে অনড় রয়েছে।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন গাজার পরিস্থিতির ওপর। কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলেও দুই পক্ষের অনমনীয় অবস্থানের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা আরও বাড়তে পারে।