শিরোনাম

ভাঙার প্রকল্প থেকে সরে এসে গড়ার প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিত: মাহফুজ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ মাস আগে
ছবি : সংগৃহীত

ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার অবসান শুধু ধ্বংসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তার পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থার নির্মাণও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নতুন বাস্তবতায় গড়ার প্রক্রিয়াকে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই— এমন মন্তব্য করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে তিনি এসব কথা লেখেন।

“আমাদের কি গড়ার সক্ষমতা রয়েছে?” শিরোনামের ওই পোস্টে মাহফুজ আলম বলেন, আমরা শুধুমাত্র কিছু স্থাপনা কিংবা প্রতীক ভাঙার লড়াই করছি না, বরং বৃহত্তর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধেও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। শুধুমাত্র প্রতীক ভাঙার পরিবর্তে আমাদের উচিত প্রতিপক্ষের শক্তির মোকাবেলায় পাল্টা পরিকল্পনা, শক্তি ও প্রভাব তৈরিতে মনোযোগী হওয়া। ধ্বংসের পথ থেকে সরে এসে আমাদের এখন নির্মাণের দিকে এগিয়ে যাওয়া জরুরি।

তিনি উল্লেখ করেন, লীগ বা শেখ হাসিনা স্বতন্ত্র কোনো সত্তা নয়, বরং বৃহত্তর আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের অংশ। এই আধিপত্যবাদ রাষ্ট্র পরিচালনার সুসংগঠিত কাঠামো, দক্ষ মানবসম্পদ ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করেছে। আমরাও যদি সত্যিকারের পাল্টা শক্তি গড়ে তুলতে চাই, তবে এই তিনটি বিষয়— রাষ্ট্রের পরিকল্পনা, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ও দক্ষ জনবল— নিশ্চিত করতে হবে। ধ্বংসের পর নতুন কিছু গড়ে তোলার সুযোগ এসেছে, কিন্তু কেবলমাত্র ধ্বংসাত্মক নীতি ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক কোনো বার্তা বহন করে না। তাই নির্মাণের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম জানান, সংস্কার কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হবে। আহত ও নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন এবং জুলাই গণহত্যার বিচারের কাজও চলমান রয়েছে, যা চলতি মাসেই আরও গতি পাবে।

তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার অবসান শুধুমাত্র ধ্বংসের মাধ্যমে সম্ভব নয়; বরং একটি কার্যকর বিকল্প কাঠামো তৈরি করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নতুন বাস্তবতায় ধ্বংসের পরিবর্তে নির্মাণের দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই। পাশাপাশি তিনি আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, খুনী হাসিনার বক্তব্য প্রচার এবং তার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য মূলত এই আধিপত্যবাদই দায়ী।

মাহফুজ আলম বলেন, প্রতিক্রিয়ার রাজনীতির চেয়ে আমাদের কৌশলগত চিন্তাভাবনার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। কারণ, এই লড়াই দীর্ঘমেয়াদী এবং এটি মীমাংসিত হতে অন্তত এক দশক সময় লাগতে পারে। কিন্তু সেই দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য আমাদের প্রস্তুতি এখনো যথেষ্ট নয়।

তিনি আরও বলেন, রাগ, ক্ষোভ ও নেতিবাচক আবেগকে ইতিবাচক শক্তিতে রূপান্তরের সুযোগ অভ্যুত্থানের পর আমাদের সামনে এসেছিল, যা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আগামী দশ বছরব্যাপী গণতান্ত্রিক ও আধিপত্যবাদবিরোধী সংগ্রামে আমাদের সৃজনশীল শক্তিকে কাজে লাগানো দরকার। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ইতিহাস আমাদের সুযোগ দিয়েছে, এবার জয়ী হতে হবে। আর এই জয় নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হলো— সুস্পষ্ট রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং মর্যাদাবান ও দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা। আল্লাহ আমাদের দূরদৃষ্টি দান করুন।