বাংলাদেশকে তিস্তার পানি দেওয়া হবে না—স্পষ্ট করে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তাঁর মতে, প্রতিবেশী দেশকে তিস্তার পানি দিলে পশ্চিমবঙ্গে খাবার পানির সংকট সৃষ্টি হবে। তিস্তার পানি বাংলাদেশের সাথে ভাগাভাগি নিয়ে এর আগেও বিরোধিতার কথা জানিয়েছেন মমতা। সম্প্রতি রাজ্য বিধানসভা অধিবেশনে বক্তৃতাকালে তিনি তিস্তা ইস্যুতে সোচ্চার হয়ে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের স্বার্থে তিস্তার পানি দেওয়া অসম্ভব।
মমতা ব্যানার্জি বিধানসভায় অভিযোগ করেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গকে না জানিয়েই তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছে, যা আগে কখনো হয়নি। তিনি বলেন, ‘দিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠকে জানিয়ে এসেছি, সেখানে বাংলার কোনো প্রতিনিধি ছিল না। এতে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? তিস্তা নিয়ে যদি পানি দেওয়া হয়, উত্তরবঙ্গের মানুষ খাবার পানির অভাবে ভুগবে।’
মমতা আরও বলেন, ‘প্রথমে বাংলার প্রয়োজন পূরণ হবে, তারপর প্রতিবেশী রাষ্ট্র। কিন্তু বাংলাদেশকে উপেক্ষা করা হচ্ছে, এমন নয়।’ তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘বাংলাদেশের সাথে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য যা সম্ভব, তা দিয়েছি। তবে যা দিতে পারব না, তার জন্য কোনো আপস করব না। আমার নাকের ডগা দিয়ে আমারই পানি নিয়ে যাবে? দক্ষিণবঙ্গ বা উত্তরবঙ্গ, কেউই এটি মেনে নেবে না। আমি বাংলার মানুষের কাছে দায়বদ্ধ, তাদের স্বার্থকে অবজ্ঞা করতে পারব না।’
মমতা স্মরণ করিয়ে দেন, ‘১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টনের চুক্তির সময় পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসুর মতামত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন কেন বাংলাকে আলোচনা থেকে বাদ রাখা হচ্ছে?’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘সিকিমের বাঁধের কারণে তিস্তায় পানি কমে গেছে।’ তাঁর প্রশ্ন, ‘সিকিমে তিস্তার ওপর কেন এত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প? আমরা প্রতিবাদ করছি বলে বাংলাকে ভাগ করার চেষ্টা হচ্ছে? এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
মুর্শিদাবাদ, মালদাসহ বিভিন্ন এলাকায় গঙ্গার ভাঙন নিয়ে কেন্দ্রকে তিরস্কার করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে ফারাক্কা ব্যারাজের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফারাক্কার ওপর পশ্চিমবঙ্গের বিশালসংখ্যক মানুষ নির্ভরশীল, কিন্তু ফারাক্কায় কোনো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। এর ফলে গঙ্গার ভাঙন প্রকট হয়ে উঠছে।’
মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে প্রতি বছর বন্যার সমস্যা নিয়েও কেন্দ্রকে সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে, ‘ড্রেজিং না করার কারণে প্রতি বছর বন্যার প্রবণতা দেখা দেয়।’ এ বিষয়ে দামোদর ভ্যালি করপোরেশন (ডিভিসি) কর্তৃপক্ষকেও আক্রমণ করেছেন মমতা। তিনি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের পাশাপাশি ভারত-ভুটান যৌথ নদী কমিশন গঠনের দাবি তুলেছেন।