১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে লড়াই করা মুক্তিযোদ্ধারাই কেবলমাত্র ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। অন্যদিকে, দেশ ও বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন, কূটনৈতিক সহায়তা প্রদান ও সংগঠকের ভূমিকা পালন করা ব্যক্তিরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত হবেন।
এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রচলিত আইনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় এমন আট শ্রেণির ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যারা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি। এ বিষয়ে পরিবর্তন আনতে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২২’ সংশোধন করে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রণয়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের মতামতও নেওয়া হয়েছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে এটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
ফারুক ই আজম জানান, নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে এবং অন্যদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। তিনি বলেন, “যারা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন, তাদের মর্যাদা রক্ষা করা জরুরি। অন্যদিকে, যারা বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন, তাদের ভূমিকা স্বীকৃত হলেও তা মুক্তিযোদ্ধার সমান মর্যাদা পাবে না।”
নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছেন, বিদেশে জনমত গঠন করেছেন, মুজিবনগর সরকারের দায়িত্ব পালন করেছেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেছেন, চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন কিংবা কূটনৈতিক সমর্থন আদায়ে ভূমিকা রেখেছেন, তারা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে স্বীকৃত হবেন।
বর্তমান আইনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়ে যারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন। নতুন খসড়ায় এ অংশটি বাদ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, নতুন অধ্যাদেশে বীরাঙ্গনা নারী, ফিল্ড হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ফারুক ই আজম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রবল আপত্তি রয়েছে যে, রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের সঙ্গে অন্যদের একই মর্যাদায় রাখা উচিত নয়। তিনি নিজেও মনে করেন, যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, তাদের আলাদা স্বীকৃতি থাকা উচিত।
বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারিত রয়েছে ১২ বছর ৬ মাস। তবে এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। আদালতের রায় অনুযায়ী এ বয়সসীমা বহাল থাকলে, ভুল তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া অনেকেই তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন।
বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন দাবি জানিয়েছে, ভুল তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নেওয়া ব্যক্তিরা ২৬ মার্চের মধ্যে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করলে তাদের বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখা হতে পারে। তবে এ বিষয়ে সরকার এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৯১,৯৯৮ জন। গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২,৫৬,৪৭৬ জন।
নতুন খসড়া অধ্যাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা ও মর্যাদার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।