আয়নাঘরের প্রধান পরিকল্পনাকারী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং তার স্ত্রী শাহনাজ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি সংস্থাগুলিতে কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
শেখ হাসিনার সহযোগিতায় বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় এবং পাচার করার পাশাপাশি, তাদের গোপন বিনিয়োগ রয়েছে দেশের একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) নাগরিকদের ফোন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আড়ি পাতার কাজ করে আসছিল, যার কারিগরি সহায়তা এবং অবৈধ যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেছে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি। টাইগার আইটি মূলত শাহনাজ সিদ্দিকীর হাত ধরে এনটিএমসির সঙ্গে যুক্ত হয়।
এছাড়া, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং অন্যান্য প্রকল্পের বাস্তবায়নেও এই বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান জড়িত। বেসরকারি বিমান সংস্থার অনুমোদন, ঋণ এবং ব্যবসা সম্প্রসারণে সরাসরি মদদও দেওয়া হয়েছে এ দম্পতির পক্ষ থেকে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এসব তথ্য সামনে এসেছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, তারিক আহমেদ সিদ্দিক শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিকের ছোট ভাই। তিনি ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুনরায় এ পদে নিয়োগ পান। গত জানুয়ারিতে তারিক সিদ্দিককে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় নিয়োগ দেন শেখ হাসিনা।
তবে, তারিক সিদ্দিকের প্রকৃত প্রভাব ছিল তার স্ত্রী শাহনাজের ওপর। বিভিন্ন সরকারি কাজ বারিধারার ১২২/২ নম্বর বাড়ি থেকে বণ্টিত হত। আওয়ামী লীগের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্লোগানের সুবিধাভোগী ছিলেন তারা। বিভিন্ন প্রকল্পে টেন্ডার বিতরণে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এবং কমিশন কিংবা মালিকানার মাধ্যমে অর্থ লাভ করতেন।
নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঘটনায় এনটিএমসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সহযোগী ছিলেন টাইগার আইটির চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান। এনটিএমসির শীর্ষ কর্মকর্তারা আইনের আওতায় এলেও টাইগার আইটির চেয়ারম্যান ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। টাইগার আইটি, আইবিসিএস-প্রাইমেক্স এবং সিএসএল এনটিএমসির আড়ি পাতা প্রকল্পের কারিগরি উন্নয়নে যুক্ত হয় এবং অবৈধ যন্ত্রপাতি আমদানিতে কমিশন নিতেন তারা।
তুসুকা গ্রুপ নামের একটি শিল্পগোষ্ঠীতেও বিনিয়োগ রয়েছে তাদের। তুসুকা গ্রুপের একজন পরিচালককে ২০২০ সালে একটি বেসরকারি ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং আরেক পরিচালককে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংসদ সদস্য বানানো হয়। এই ব্যবসায়িক গ্রুপের মাধ্যমে বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে।