গাজায় চলমান সহিংসতা ও প্রাণহানির প্রতিবাদে বৈশ্বিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুই মানবিক সংগঠন—‘নিউইয়র্ক হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন’ ও ‘ডক্টর্স অ্যাগেইনস্ট জেনোসাইড’। আজ সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরের সামনে স্থানীয় কর্মীদের অংশগ্রহণে এই কর্মসূচি পালিত হবে। কর্মসূচির শিরোনাম রাখা হয়েছে—‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’।
অন্যদিকে ফিলিস্তিনভিত্তিক জোট ‘দ্য ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস ইন প্যালেস্টাইন’ বিশ্বব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ পালনের আহ্বান জানিয়েছে। ‘গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কাজ নয়, স্কুল নয়’—এই স্লোগানে আজকের দিনে ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
এদিকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নারী ও শিশুদের মৃতদেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৬ জন ফিলিস্তিনি। বিধ্বস্ত হয়েছে আরও বহু ভবন। এর আগে, ২৩ মার্চ গাজায় ১৫ জন চিকিৎসাকর্মীকে গুলি করে হত্যার দায় স্বীকার করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তারা দাবি করেছে, ওই সময় গাড়িবহরটি সন্দেহজনক মনে হয়েছিল।
‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচি নিয়ে হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন তাদের ইনস্টাগ্রামে জানিয়েছে, গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধের দাবিতে তারা বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এই আহ্বান বাস্তবায়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থল বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। তাদের মতে, এখনই সময় পদক্ষেপ নেওয়ার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রসঙ্গ টেনে তারা বলেছে, গোটা বিশ্ব যখন মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কথা বলছে, তখন গাজাবাসী বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বোমার আঘাতে হাসপাতাল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অসংখ্য মা ও শিশু চিকিৎসার অভাবে এবং হামলায় প্রাণ হারাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর যুক্তরাষ্ট্র সফর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। আজ তিনি হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্কনীতি, ইরান ও হামাস প্রসঙ্গে আলোচনা করবেন। এই সফর নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যাকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা করেছে, সেই নেতানিয়াহুই আজ হোয়াইট হাউসে বৈঠকে বসছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গাজাবাসীর ন্যায়ের দাবিতে সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে। জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে যুদ্ধাপরাধে জড়িতদের। যখন একটি জাতি অনাহার ও বোমার আঘাতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, তখন চুপ করে বসে থাকা নৈতিকভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। তাই এখনই প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার সময়।
এদিকে ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ‘ওয়াফা’ জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে সোমবার ফিলিস্তিনজুড়ে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হবে। এই ধর্মঘটের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহানুভূতি এবং ন্যায়বিচারের প্রতি সংহতি জানানো হবে।
ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্সেস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী নির্বিচারে নারী ও শিশু হত্যা করছে, বাড়িঘর ধ্বংস করছে, মানুষকে বাস্তুচ্যুত করছে। এসব মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে রুখে দাঁড়াতে হবে।
রোববার ভোরে গাজার খান ইউনিস এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় ৯ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। ঘটনাস্থলে থাকা বাসিন্দা জামাল আল-মধুন জানান, তারা ঘুমিয়ে ছিলেন, হঠাৎ বিস্ফোরণে ঘরবাড়ি ধসে পড়ে। ধ্বংসস্তূপ থেকে আটটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলোর সবাই নারী ও শিশু।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৩৮ জন আহত হয়েছেন।
সম্প্রতি ইসরায়েল দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে হামলার মাত্রা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে। এই শহরটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সেখানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।