সিরিয়ার বিদ্রোহী যোদ্ধারা দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমস দখলের পর, কোনো বাধা ছাড়াই রোববার রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করে। রাজধানীতে প্রবেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিদ্রোহীরা ঘোষণা করে যে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার পতন হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি এবং রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদ্রোহীদের এই অগ্রযাত্রার মুখে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে গেছেন। এর মাধ্যমে আসাদ পরিবারের পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা শাসনের অবসান ঘটল বলে মনে করা হচ্ছে।
২০১১ সালে আরব বসন্তের ঢেউ সিরিয়ায় বিক্ষোভের সূচনা করেছিল, যা পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। রাশিয়া এবং ইরানের সমর্থনে বাশার আল-আসাদ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে সক্ষম হন। তবে সাম্প্রতিক সংঘাতে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ হারায় তার সরকার।
রোববার বিদ্রোহীরা টেলিগ্রামে বার্তা দিয়ে জানায়, “বাথ শাসনের অধীনে ৫০ বছরের দমন-পীড়ন এবং ১৩ বছরের সহিংসতা ও নিপীড়নের পর আমরা সিরিয়ার জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা ঘোষণা করছি।”
হোমস থেকে সিরিয়ান সেনাবাহিনী পিছু হটার পর হাজারো বাসিন্দা রাস্তায় নেমে আসেন। তারা স্লোগান দেয়, “আসাদ শেষ, হোমস মুক্ত” এবং “সিরিয়া দীর্ঘজীবী হোক, আসাদ নিপাত যাক।” বিদ্রোহীরা উদযাপনের অংশ হিসেবে আকাশে গুলি ছোড়ে, আর তরুণরা আসাদের ছবি ছিঁড়ে ফেলে।
দুই সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, বিদ্রোহীরা সরকারি বাহিনীর কোনো বাধা ছাড়াই দামেস্কে প্রবেশ করেছে। হাজারো মানুষ গাড়ি ও পায়ে হেঁটে রাজধানীর প্রধান চত্বরে জড়ো হয়ে স্বাধীনতার স্লোগান দেয়।
বিদ্রোহীরা আরও জানায়, তারা কুখ্যাত সাইদনায়া সামরিক কারাগারে প্রবেশ করেছে এবং বন্দিদের মুক্ত করেছে।
এদিকে, ব্রিটেনভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের সূত্রে জানা গেছে, সরকারি বাহিনীর সদস্যরা দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরে গেছে। রাজধানীর বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শহরে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।
১৯৭০ সালে জেনারেল হাফিজ আল-আসাদ ক্ষমতা দখল করেন এবং তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে শক্ত হাতে দেশ শাসন করেন। তিনি আলাওয়াতি সম্প্রদায়ের ওপর ভিত্তি করে দেশের নিয়ন্ত্রণ কুক্ষিগত করেন এবং নিজের ক্ষমতা দৃঢ় করেন। ২০০০ সালে তার মৃত্যু হলে তার কনিষ্ঠ পুত্র বাশার আল-আসাদ ক্ষমতায় আসেন এবং প্রায় দুই দশক ধরে স্বৈরাচারী শাসন কায়েম রাখেন।