সিরিয়ার দীর্ঘমেয়াদি প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ, যিনি দুই দশক ক্ষমতায় ছিলেন, বিদ্রোহীদের আক্রমণে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন এবং রাশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। রোববার (৮ ডিসেম্বর) ঘটে যাওয়া এই নাটকীয় ঘটনায় সিরিয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় পরিবর্তন এসেছে।
রাশিয়ার আশ্রয় প্রদান
রাশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা তাস ও রয়টার্স জানায়, ক্রেমলিন জানিয়েছে যে মানবিক কারণে বাশার আল আসাদ ও তার পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তবে সিরিয়ায় এই পরিবর্তন রাশিয়ার ‘সিরিয়া প্রকল্পের’ ভবিষ্যতকে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
২০১৫ সালে, গৃহযুদ্ধের কারণে প্রায় পতনের মুখে থাকা আসাদ সরকারকে রক্ষা করতে রাশিয়া উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। রাশিয়ার সেনা উপস্থিতি ও সামরিক সহায়তা আসাদের শাসন শক্তিশালী করতে সহায়তা করেছিল। সিরিয়ায় তাদের মূল লক্ষ্য ছিল পূর্ব ভূমধ্যসাগরে সামরিক প্রভাব বিস্তার করা এবং বিশ্ব পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করা।
রাশিয়া সিরিয়ায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি—হামিমিম বিমানঘাঁটি এবং টারতুস নৌঘাঁটি—৪৯ বছরের জন্য ইজারা নিয়ে পরিচালনা করছিল। তবে আসাদের পতনের পর এসব ঘাঁটির ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিদ্রোহী নেতারা ঘাঁটিগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিলেও, রাশিয়া তাদের সামরিক উপস্থিতিকে উচ্চ সতর্কাবস্থায় রেখেছে।
আসাদের পতন রাশিয়ার জন্য একটি বড় কূটনৈতিক ধাক্কা। সিরিয়াকে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অন্যতম মিত্র হিসেবে ব্যবহার করছিল রাশিয়া। কিন্তু এই পরিবর্তনের ফলে, সিরিয়ায় রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ এখন হুমকির মুখে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা সিরিয়ার বিদ্রোহী ও অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়ার জন্য এখন প্রধান অগ্রাধিকার।
সিরিয়ার সেনাবাহিনীর দুর্বলতা নিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সমালোচনা হয়েছে। বিশেষ করে আলেপ্পোতে বিদ্রোহীদের সামনে সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের ঘটনা রাশিয়ার জন্য উদ্বেগের কারণ।
এই পরিবর্তন রাশিয়ার বৈশ্বিক মর্যাদায় উল্লেখযোগ্য আঘাত হেনেছে। সিরিয়ার রাজনৈতিক সংকটের ফলে রাশিয়াকে নতুন কৌশল তৈরি করতে হবে, যা তাদের জন্য এক কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।