বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগে করা রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি হয়েছে। আইনজীবীদের মতে, এই রায়ের মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা আবার ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’-এর হাতে ফিরে এসেছে। রবিবার (২০ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ রায় প্রদান করে। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, এবং রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
গত ১৫ আগস্ট বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে দিতে আনা ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন গ্রহণের কথা জানানো হয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ আবেদনের শুনানি অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ এ বিষয়ে দিন ধার্য করেছেন।
এর আগে, ১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ছিল। পরে, ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এই ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছে স্থানান্তরিত করা হয়। এরপর জিয়াউর রহমানের শাসনামলে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ‘সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল’-এর কাছে দেওয়া হয়, যেখানে ৯৬ অনুচ্ছেদে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছিল।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ষোড়শ সংশোধনী পাস করে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা আবারও সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়, এবং একই বছর ২২ সেপ্টেম্বর এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। পরে ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এরপর, হাইকোর্ট ৯ নভেম্বর একটি রুল জারি করে, যাতে সংশোধনীর অবৈধতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
রুল শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দেয়। এর পর রাষ্ট্রপক্ষ ৪ জানুয়ারি ২০১৭ এ বিষয়ে আপিল করে। ২০১৭ সালের ৩ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। ১ আগস্ট ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়।
এই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে, কিন্তু রিভিউয়ের শুনানি এখনো হয়নি।