কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর ব্যাপক সহিংসতার কারণে জনজীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার থেকে সরকার কারফিউ শিথিলের সময়সীমা বাড়িয়েছে। গতকাল রাজধানীতে স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য দেখা গেছে এবং সড়কে ছিল যানজট। বিকাল ৫টার পর পুনরায় কারফিউ শুরু হওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক, মোড় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সামনে সেনা সদস্যরা অবস্থান নেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোয় সেনা টহল দেখা গেছে। এ সময় পথচারী ও বিভিন্ন যানবাহন থামিয়ে তল্লাশি করা হয়। কারফিউ পাস, কর্মস্থলের পরিচয়পত্র ও বাইরে থাকার যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
গত শুক্রবার থেকে ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। অন্যান্য জেলায় পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসকদের ওপর। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় গতকাল নতুন অফিস ও ব্যাংকের সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। আজ থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সব সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত (৬ ঘণ্টা) খোলা থাকবে এবং ব্যাংক সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত (৫ ঘণ্টা) চলবে।
অফিস চলবে ৯টা-৩টা : তিন দিনের জন্য দেশের সব সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিসের নতুন সময়সূচি ঠিক করেছে সরকার। আজ রবিবার থেকে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত অফিস চলবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় চলমান কারফিউর সময়সীমা শিথিলের সময়ও বাড়াচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অফিসের সময়ও বাড়ানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্উদ্দিন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলমান পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে অফিসসূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর আগে দুই দিন অফিস চলেছে চার ঘণ্টার জন্য। রবিবার থেকে আগামী মঙ্গলবার চলবে ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অর্থাৎ ছয় ঘণ্টার জন্য। পরের সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে। জানা গেছে, সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বাইরে ব্যাংক ও আদালত তাদের অফিসসূচির বিষয়ে নিজেরা সিদ্ধান্ত নেবেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেওয়ায় গত সপ্তাহে সরকার টানা তিন দিন, ২১, ২২ এবং ২৩ জুলাই, সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। পরে ২৪ ও ২৫ জুলাই অফিস চার ঘণ্টার জন্য খোলা হয়, সকাল ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত। এরপর শুক্র ও শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এ সপ্তাহও একইভাবে কাটতে পারে। সরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং উন্নতি হওয়ায় অফিসের সময় চার ঘণ্টা থেকে ছয় ঘণ্টা করা হয়েছে।
ব্যাংক লেনদেন ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত : আজ থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের সব ব্যাংক প্রতিদিন সাড়ে ৫ ঘণ্টা খোলা থাকবে, তবে লেনদেন চলবে ৫ ঘণ্টা। লেনদেন শুরু হবে সকাল ১০টায় এবং চলবে বেলা ৩টা পর্যন্ত। দাপ্তরিক কাজ শেষ করতে ব্যাংকগুলো বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্রিক সহিংসতা ও কারফিউ জারির কারণে গত ১৯ জুলাই থেকে টানা পাঁচ দিন দেশে ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ২৪ ও ২৫ জুলাই ব্যাংক খোলা ছিল বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত মাত্র ৩ ঘণ্টা। উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি গত ১৯ জুলাই শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। এখনো বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। শুরুর দিকে কারফিউ শিথিলের সময় কম থাকলেও পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় পর্যায়ক্রমে কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ানো হয়েছে।