শিরোনাম

হাসিনার সম্মতিতে পরিকল্পিত মাদক সন্ত্রাস: বাস্তবতা, অভিযোগ ও প্রভাব

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১ দিন আগে

বাংলাদেশে মাদক-সন্ত্রাসের বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে, তবে সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে আরও ভয়াবহ তথ্য। অভিযোগ উঠেছে, পরিকল্পিতভাবে মাদক চোরাচালান বাড়ানো হয়েছে, যা দেশের যুবসমাজকে ধ্বংস ও অর্থনীতিকে পঙ্গু করার কৌশলের অংশ। বিশেষত, প্রতিবেশী দেশের কিছু সংস্থা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতায় মাদক ব্যবসা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশে মাদকের বিস্তার: পেছনের কাহিনি

বাংলাদেশে ইয়াবার আগ্রাসন শুরু হয় ২০০০ সালের পর থেকে, তবে এটি ভয়ংকর রূপ নেয় ২০১০ সালের পর। বিশেষ করে কক্সবাজার ও টেকনাফ সীমান্ত হয়ে মিয়ানমার থেকে ব্যাপক হারে ইয়াবা আসতে থাকে। অভিযোগ রয়েছে, এই মাদক ব্যবসার সঙ্গে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা জড়িত।

গডফাদারদের সংশ্লিষ্টতা: তথ্য ও অভিযোগ

গোয়েন্দা তথ্য এবং স্থানীয় সূত্র মতে, কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ছিলেন এই ব্যবসার অন্যতম নিয়ন্ত্রক। তবে শুধু তিনিই নন, ক্ষমতাসীন দলের অনেক শীর্ষ নেতা মাদক চোরাচালানে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গোয়েন্দা অনুসন্ধানে উঠে এসেছে যে:

  • আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল
  • সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহিদুল হক

এরা সবাই মাদক ব্যবসা থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন নিতেন। এ বিষয়ে বারবার অভিযোগ আসলেও শীর্ষ মহল থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার তথ্য

গোয়েন্দা সংস্থার এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের অনেক সদস্য বদি ও তার স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক চাপের কারণে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে:

  • বদির ইয়াবা ব্যবসা থেকে কমিশন পেতেন দলের শীর্ষ নেতারা।
  • কক্সবাজার ও টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার ইয়াবা পাচার হয়েছে।
  • স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মাদকবিরোধী অভিযান

সরকারের পক্ষ থেকে মাদকবিরোধী অভিযান চালানো হলেও, দেখা গেছে এই অভিযানে প্রকৃত গডফাদারদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নিম্নস্তরের ডিলারদের ধরা হয়েছে। টেকনাফে পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ শত শত মানুষ নিহত হলেও বড় অপরাধীরা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

২০১৮ সালে কথিত ‘মাদক নির্মূল’ অভিযানে:

  • ১৪৪ জনকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে।
  • যারা প্রকৃত অপরাধী, তারা পুলিশের ছত্রছায়ায় ব্যবসা চালিয়ে গেছে।
  • অপরাধ ফাঁস করায় ইয়াবা মাফিয়া হাজি সাইফুল আলমকে হত্যা করা হয়।

হাসিনার ভূমিকা: অভিযোগ ও বাস্তবতা

কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষকরা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে অবগত ছিলেন, কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে কোনো ব্যবস্থা নেননি।

সূত্র মতে:

  • ২০১৮ সালে কক্সবাজারের স্থানীয় নেতারা যখন শেখ হাসিনার কাছে বদির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, তিনি উল্টো তাদের ধমক দেন।
  • বদির সরাসরি সুপারিশে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ফান্ডের জন্য মাদক ব্যবসা থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছিল।
  • সরকারের শীর্ষ মহল থেকে বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়।

মাদক কারবারের আন্তর্জাতিক প্রভাব

গোয়েন্দা সংস্থার মতে, প্রতিবেশী দেশের সহযোগিতায় পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে মাদকের বিস্তার ঘটানো হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ছিল:

  • যুবসমাজকে মাদকের সঙ্গে যুক্ত করে দেশের ভবিষ্যৎ দুর্বল করা।
  • বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো দুর্বল করা।
  • সীমান্তে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা।

সমাধান ও করণীয়

বাংলাদেশে মাদকের বিস্তার রোধে প্রয়োজন:

  1. সুষ্ঠু তদন্ত ও উচ্চপর্যায়ের অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা।
  2. গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর স্বাধীন তদন্তের সুযোগ সৃষ্টি করা।
  3. রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি শক্তিশালী মাদক নিয়ন্ত্রণ কমিটি গঠন।
  4. বিচারবহির্ভূত হত্যার পরিবর্তে সঠিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ।
  5. আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে মাদক চোরাচালান রোধ করা।

No tags found for this post.