বর্ষাকাল বিদায় নেওয়ার পথে। চলতি মাসের মধ্যভাগের আগেই মৌসুমি বায়ুর প্রভাব থেকে মুক্ত হবে বাংলাদেশ। এ বছরের বর্ষা মৌসুমে দেশের অনেক অঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের দেখা মেলেনি। তবে সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হলেও, রংপুর বিভাগে স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টি হয়েছে এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি পূর্বাভাস দিয়ে জানিয়েছে, অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে তিনটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। সারা দেশে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম (জিএফএস) বিশ্লেষণ করে জানান, অক্টোবরের ১৫ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, অতীতে এই সময়ে দেশে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। ২০২২ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এবং ২০২৩ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ দেশের খুলনা ও বরিশাল উপকূলে আঘাত করেছিল।
পলাশ আরও বলেন, শনিবারের মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলের ওপরে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে এবং আজ বুধবার থেকেই সমুদ্র উত্তাল হতে পারে। এতে শনিবার পর্যন্ত সমুদ্র উত্তাল থাকায় জেলেদের মাছ ধরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও বরিশাল উপকূলীয় সমুদ্র এলাকা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জেলেদের গভীর সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান ড. মো. ছাদেকুল আলম সভাপতিত্বে মঙ্গলবারের এক বৈঠকে মাসব্যাপী পূর্বাভাস দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, অক্টোবরের প্রথমার্ধেই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ধীরে ধীরে বিদায় নেবে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে দুই থেকে চার দিন মাঝারি থেকে তীব্র বজ্রঝড় এবং সারা দেশে তিন থেকে পাঁচ দিন হালকা থেকে মাঝারি বজ্রঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। দিনের ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেলেও স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকবে। এছাড়া অক্টোবর মাসে দেশের প্রধান নদ-নদীতে স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় থাকবে। তবে ভারী বৃষ্টির কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, অক্টোবরের প্রথমভাগেই সাধারণত বর্ষা বিদায় নেয়, তবে এবার কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। পুরো দেশ থেকে বর্ষা বিদায় নেবে ধীরে ধীরে। তিনি বলেন, অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়প্রবণ মাস, এ সময়ে সাগরে একাধিক সিস্টেম তৈরি হতে পারে এবং ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা প্রবল।
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। অতীতে এমন ঘূর্ণিঝড়ের সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়েছে, তাই এবারের সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি। বিশেষজ্ঞরা উপকূলীয় অঞ্চলে সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখার এবং মাছ ধরার নৌকাগুলো নিরাপদ স্থানে ফিরিয়ে আনার জন্য জেলেদের সতর্ক করতে বলেছেন। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপকূলীয় জনগণকে সচেতন করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার গুরুত্বও তুলে ধরা হয়েছে।
পলাশ আরও জানান, সোমবার থেকে রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে বৃষ্টিপাত কমে এসেছে, ফলে তিস্তা নদীর পানির উচ্চতা বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।