শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর মাসব্যাপী চলা হত্যাযজ্ঞ ও নৃশংসতার শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে ৫ আগস্ট, জনগণের বিজয় মিছিলে গুলি চালানো হয়, যার ফলে ১১১ জন প্রাণ হারায় এবং কয়েকশ’ তরুণ পঙ্গুত্ব বরণ করে।
রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে এখনও আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা চলছে। তাদের মধ্যেই একজন নবম শ্রেণির ছাত্র আল-আমিন, যিনি দেশ বাঁচাতে গিয়ে তার একটি পা হারিয়েছেন।
আল-আমিন জানান, তারা ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এলাকা থেকে বিজয় মিছিল নিয়ে বের হয়েছিলেন। পরে থানা এলাকায় গেলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তখন আল-আমিন বসে ছিল, হঠাৎ দৌড় দিলে একটি গুলি তার পায়ে লাগে, যা পেছন থেকে ঢুকে সামনে দিয়ে বের হয়ে যায়।
পা হারিয়েও আল-আমিনের কোনো ক্ষোভ নেই। বরং সে জানায়, দেশের প্রয়োজনে আবারও নামতে প্রস্তুত। সে আরও আহ্বান জানায় যে, যারা আন্দোলনে আহত হয়েছে, সরকার যেন তাদের পাশে দাঁড়ায়।
আল-আমিনের বাবা-মায়েরও ছেলের পা হারানোর কোনো আক্ষেপ নেই। তারা জানান, আন্দোলনে যারা পঙ্গু হয়েছেন বা গুরুতর আহত হয়েছেন, তাদের যেন ভবিষ্যতে ভিক্ষা করে বাঁচতে না হয়। তারা আরও বলেন, ছয় ঘণ্টা আগে চিকিৎসা পেলে হয়তো পা কাটা লাগতো না।
হাসপাতালের বিছানায় কষ্ট পাচ্ছে আরেকজন, অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তামিম। বিজয় উদযাপনে তার মামার সঙ্গে বের হয়েছিলেন। মামা অক্ষত ফিরলেও, তামিম গুলিবিদ্ধ হয়ে তার একটি পা হারিয়েছেন।
তামিমের মামা জানান, বিজয় উদযাপনে কোনো শঙ্কা ছিল না, হঠাৎ ১০-১৫ জন পুলিশ এসে গুলি ছোড়া শুরু করে, যার ফলে তামিমের পা কাটা পড়ে।
এত আত্মত্যাগ, এত দেশপ্রেম, এত সাহস কোথায় পেলো এই তরুণরা? এত আহাজারি, কষ্ট আর হারানোর বেদনা কি শেষ পর্যন্ত পূর্ণতা পাবে? তাদের আত্মত্যাগ যেন আমরা কখনো ভুলে না যাই।