প্রশংসা কখনও কখনও অস্বস্তির কারণ হতে পারে, আবার কখনও তা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। যেমনটি ঘটেছে ব্রিকস সম্মেলনের ঠিক আগে, যখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করেন।
এই মুহূর্তে ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের উত্থান-পতনের দিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো গভীর নজর রাখছে। এতে কূটনৈতিক সমীকরণও কাজ করছে—একদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চায় নয়াদিল্লি রাশিয়ার সাথে দর-কষাকষি করুক, আবার অন্যদিকে, ভারত রাশিয়া থেকে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অশোধিত তেল আমদানি করায় ওয়াশিংটনের উদ্বেগ বাড়ছে।
এই প্রেক্ষাপটে পুতিন বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি আমাদের বন্ধু। তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বারবার আমাদের আলোচনা করেছেন এবং তার পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ।’ তবে পুতিন এটাও উল্লেখ করেন যে এই যুদ্ধ কবে শেষ হবে, তা বলা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি বলেন, রাশিয়া শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ইউক্রেন তা চায় না। মোদির প্রশংসা করার পাশাপাশি পুতিন যুক্তরাষ্ট্রকেও সমালোচনা করতে ছাড়েননি। তিনি বলেন, ‘নেটো আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তবে আমরা জিতব এবং যুদ্ধে টিকে থাকব।’
রাশিয়ার কাজান শহরে আগামী মঙ্গলবার থেকে ব্রিকস সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে। ব্রিকসের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পুতিন বলেন, ‘ব্রিকস পশ্চিমা শক্তির বিরোধিতা করার জন্য নয়। নরেন্দ্র মোদিও এই কথা বলেছেন, এবং তিনি সঠিক বলেছেন। ব্রিকস পশ্চিম-বিরোধী নয়, বরং একটি অ-পশ্চিমী গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠী ভবিষ্যতে বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি হবে। এর কারণ হলো, ব্রিকসভুক্ত দেশগুলোর আয়তন এবং তাদের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।’
এক মাস আগে মোদি ইউক্রেন সফর করেন এবং তারপর পুতিনের সাথে ফোনে কথা বলেন। এই আলাপচারিতায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান নিয়ে আলোচনা হয়। মোদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে পুতিনের সঙ্গে তার কথা হয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এছাড়াও, ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়েও তাদের আলোচনা হয়েছে।
মোদি ইউক্রেন সফরের সময় পরিষ্কার বার্তা দেন যে, ভারত শান্তির পক্ষে এবং প্রয়োজনে ব্যক্তিগতভাবে এই সংঘাত থামাতে সহায়তা করতে প্রস্তুত। তিনি আরও জানান, যুদ্ধ চলাকালীন ভারত কোনো পক্ষ নেয়নি, তবে তা কখনোই নিরপেক্ষ ছিল না। ভারত সবসময় শান্তির পক্ষে ছিল এবং থাকবে।
ভারত-মস্কো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বলিউডও সবসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। রাজ কাপুর থেকে শাহরুখ খান পর্যন্ত বলিউড তারকাদের রাশিয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। রাশিয়ায় ব্রিকসের দেশগুলোর সিনেমা প্রদর্শনের বিষয়ে পুতিন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব একটি টিভি চ্যানেল রয়েছে যেখানে শুধুমাত্র ভারতীয় চলচ্চিত্র দেখানো হয়। যদি ভারতের চলচ্চিত্র নির্মাতারা আগ্রহী হন, আমরা তাদের সিনেমার প্রচারের জন্য বিশেষ সুবিধা দিতে প্রস্তুত।’