চলতি বছরের এপ্রিলে ভোররাতে বলিউড অভিনেতা সালমান খানের বাসভবন গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে দুষ্কৃতকারীরা গুলি চালায়। এর আগে একাধিকবার সালমানকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। শুধু সালমান নয়, তার বাবাও একই ধরনের হুমকির শিকার হয়েছেন।
অক্টোবরের শুরুতে এনসিপি নেতা বাবা সিদ্দিকীকে গুলি করা হয়। এ ঘটনায় লরেন্স বিষ্ণোইয়ের গ্যাং জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। অথচ কিছু মহল সালমানকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করে, যদিও তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
বাবা সিদ্দিকীর মৃত্যুর পর সালমান খানের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। লরেন্স বিষ্ণোইয়ের গ্যাং ইতিমধ্যে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। সালমানের সঙ্গে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের পুরনো বিরোধ কৃষ্ণসার হরিণ শিকার নিয়ে। সিদ্দিকী হত্যার পর সালমানের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সালমান নিজেই এ নিয়ে কথা বলেছেন, যা প্রকাশ করেছে হিন্দুস্তান টাইমস।
সালমান বলেন, তিনি একজন কাছের বন্ধুকে হারিয়েছেন। বাবা সিদ্দিকীর সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল, প্রতি বছর ঈদের অনুষ্ঠানে সিদ্দিকীর নিমন্ত্রণে যেতেন সালমান। কিন্তু এবার তাকে নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে।
গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের গ্যাং দাবি করেছে, সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠতা সালমানের সঙ্গে ছিল বলেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। অনেকেই ভেবেছিলেন, সিদ্দিকীর শেষকৃত্যে সালমান উপস্থিত থাকবেন না। কিন্তু সালমান সব হুমকিকে উপেক্ষা করে ‘বিগ বস ১৮’-এর শুটিং মাঝপথে রেখে তার বন্ধুকে শেষবারের মতো বিদায় জানাতে গিয়েছিলেন।
‘বিগ বস’-এর সঞ্চালক হিসেবে সালমান সম্প্রতি তার নিরাপত্তা নিয়ে বলেছেন, “আমার জীবনে এখন যা ঘটছে, তা খুবই কঠিন সময়। আমাকে এসবের সঙ্গে মানিয়ে চলতে হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাইরে আসা ঠিক হয়নি, তবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার কারণে শুটিং বাতিল করেননি। তার মা-বাবা তাকে নিয়ে খুব চিন্তিত, যা তাকে আরও উদ্বেগে ফেলেছে।
১৯৯৮ সালে রাজস্থানের যোধপুরে কৃষ্ণসার হরিণ হত্যার ঘটনায় সালমান খানের সঙ্গে বিষ্ণোই গ্যাংয়ের বিরোধের সূত্রপাত। লরেন্স বিষ্ণোই সেই সময় মাত্র পাঁচ বছর বয়সী ছিল, কিন্তু সম্প্রদায়ের কাছে কৃষ্ণসার হরিণের বিশেষ গুরুত্বের কারণে এই ঘটনা বিষ্ণোইকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। বিষ্ণোই সম্প্রদায় বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আর কৃষ্ণসার হরিণকে তারা গুরু জাম্বেশ্বরের প্রতীক হিসেবে দেখে।
২০১৮ সালে লরেন্স বিষ্ণোই পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় সালমান খানকে হত্যা করার শপথ নেয়। এরপর ২০২২ সালে সালমানের বাবাকে একটি হুমকি চিঠি দেওয়া হয়, এবং ২০২৩ সালের মার্চে সালমান ও তার পরিবারকে ই-মেইল মারফত হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এপ্রিল মাসে গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে।
পুলিশ আরও একটি হত্যাচেষ্টা বানচাল করে যখন জানা যায়, গত মে মাসে সালমানকে পানভেলের ফার্মহাউসে একে-৪৭ দিয়ে গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। লরেন্স বিষ্ণোই সালমানকে বিষ্ণোই মন্দিরে গিয়ে ক্ষমা চাইতে বলেছিল। সম্প্রতি, ১৮ অক্টোবর মুম্বাই পুলিশ নতুন করে হুমকি পাওয়ার পর সালমান নিজের নিরাপত্তা আরও জোরদার করেছেন এবং কয়েক কোটি টাকায় বুলেটপ্রুফ গাড়িও কিনেছেন।