হত্যাচেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী জেড আই খান পান্না হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও সৈয়দ এনায়েত হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাই কোর্ট বেঞ্চ সোমবার তার জামিন মঞ্জুর করে। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হওয়া পর্যন্ত তিনি জামিনে থাকবেন।
আদালত ভবন থেকে বেরিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেন, “আমি এমন কোনো কাজ করিনি যার জন্য এই ধরনের মামলা দায়ের হবে। যদি এটি রাজনৈতিক মামলা হতো, আমার আপত্তি ছিল না—আমি জীবনে বহু রাজনৈতিক মামলার মুখোমুখি হয়েছি। তবে এটি একটি হত্যা প্রচেষ্টার মামলা, এবং মেরাদিয়া কোথায় তা আমি জানিও না, কখনও সেখানে যাইনি।”
তিনি আরও বলেন, “আজকে ডেইলি স্টারের নিউজে দেখলাম, বাদী নাকি আমাকে চিনেন না। এটি তো এখানেই পরিষ্কার যে মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমার বিবেক ও মুখ বন্ধ করার জন্য এমন করা হয়েছে, তবে আমি মরে গেলেও আমার বিবেক ও মুখ বন্ধ হবে না।”
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ গ্রহণ না করার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি বারবার বলেছি, আমি সার্টিফিকেট প্রথার ঘোরতর বিরোধী। কারণ সার্টিফিকেটের দরকার হয় না—যারা স্বাধীনতাবিরোধী ছিল তাদের বাদে সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ ছিল মুক্তিযোদ্ধা। তারা জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। আমি সব সময় এই বিভাজনের বিরোধিতা করেছি এবং করব।”
তিনি আরও বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ বা একাত্তরের উপর কোনো আঘাত বরদাস্ত করব না। যতটুকু শক্তি ও সামর্থ্য আছে, তা দিয়েই আমি লড়াই করব।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত জুলাই মাসে আহাদুল ইসলাম নামে এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় ‘হত্যাচেষ্টার’ অভিযোগে তার বাবা মো. বাকের খিলগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ৯৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে জেড আই খান পান্নাকে।
এছাড়া মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, বিজিবি মহাপরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ মোট ১৮০ জনের নাম রয়েছে আসামির তালিকায়।
জেড আই খান পান্নার আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, “এই মামলাটি তাকে হয়রানি করার জন্য করা হয়েছে। এখানে রাষ্ট্রের বা ক্ষমতাসীনদের কোনো প্রভাব আছে বলে আমি মনে করি না।”
তিনি আরও বলেন, “প্রশ্ন হচ্ছে, তাকে এই মামলায় কেন জড়ানো হলো? আপনারা জানেন, তিনি সব সময়ই ছাত্রদের পক্ষে ছিলেন এবং সরকারের সমালোচনা করেছেন। তিনি একজন প্রতিবাদী মানুষ, এবং সব সময় সত্যের সন্ধান করেন।”
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাজারের পাশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন মো. আহাদুল ইসলাম। এ সময় অভিযোগ করা হয় যে, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনসহ ১৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা সেখানে গুলি চালায়।