একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা “এনএসআই” ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে জামিন দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান জানান, “আদালত জামিনের ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত আরোপ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে— সাক্ষীদের সঙ্গে দেখা করা এবং হুমকি দেয়া যাবে না, মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা যাবে না, জামিনের শর্তে তার পাসপোর্ট জমা থাকবে, বিদেশে যেতে পারবেন না এবং যেখানে থাকবেন সেখান থেকে বের হতে পারবেন না।”
এছাড়া, মামলার নির্ধারিত তারিখগুলোতে হাজিরা দেওয়ারও শর্ত আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রংপুর সেনানিবাসের দক্ষিণে কতোয়ালি থানার এলাকায় বেসামরিক জনগণের অবস্থান ছিল। সেখানে তারা ২৫ মার্চের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতার প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন।
মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের নেতৃত্বে সেদিন সশস্ত্র সেনাবাহিনী মুক্তিকামী মানুষের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়, যার ফলে ৫০০ থেকে ৬০০ বেসামরিক লোক নিহত হয়। সেদিন আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে পরে পাকিস্তানি বাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাগের ফাঁসি দেয়। প্রসিকিউশনের অভিযোগে অন্তত ১৫ জন নিহতের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হক সেদিন গণহত্যায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন এবং ১৯৪৩ সালের জেনেভা কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন, ১৯৭৩ অনুযায়ী তিনি বিভিন্ন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দায়ের করা হয়। পরে তদন্তের প্রক্রিয়া চলাকালে তার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ ওঠে। ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, এবং ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল ওয়াহিদুল হককে গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার নথি অনুযায়ী, ১৯৬৬ সালের ১৬ অক্টোবর মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হক পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১১ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে কমিশন পান এবং পরে ২৯ ক্যাভালরি রেজিমেন্টে বদলি হন। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত তিনি ওই রেজিমেন্টের অ্যাডজুটেন্ট ছিলেন।
ওই বছরেই তিনি পাকিস্তানে ফিরে যান এবং ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফেরেন। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা মহানগরের অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওয়াহিদুল হক ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছিলেন।