শিরোনাম

বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের ছড়াছড়ি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে

৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঘিরে একের পর এক মিথ্যা খবর ছড়িয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। এসব খবরের সত্যতা যাচাই করে তথ্য যাচাই সংস্থা রিউমর স্ক্যানার সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তারা নিশ্চিত করেছে, ১২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত অন্তত ১৩টি ভুয়া খবর শনাক্ত করা হয়েছে।

ভুয়া খবরে শীর্ষে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো

রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভারতের ৪৯টি গণমাধ্যম বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছে। এর মধ্যে রিপাবলিক বাংলা সর্বাধিক পাঁচটি ভুয়া খবর ছড়িয়েছে। এছাড়া হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ, ও লাইভ মিন্ট তিনটি করে, এবং ইন্ডিয়া টুডে, এবিপি আনন্দ, ও আজতক অন্তত দুটি করে গুজব প্রকাশ করেছে।

কিছু উল্লেখযোগ্য গুজব ও সত্যতা যাচাই

১. শেখ হাসিনার ‘খোলা চিঠি’ নিয়ে বিভ্রান্তি:
ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়, ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর শেখ হাসিনা একটি চিঠিতে তার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন।
সত্যতা: চিঠিটি ভুয়া এবং কোনো বিশ্বাসযোগ্য সূত্রে এর ভিত্তি মেলেনি। এটি প্রথমে ফেসবুকে ছড়ানো হয় এবং পরবর্তীতে ত্রিপুরার একটি পত্রিকা তা মুদ্রণ করে।

২. নিখোঁজ ব্যক্তির ভিডিও নিয়ে বিভ্রান্তি:
একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়, একজন হিন্দু ব্যক্তি তার নিখোঁজ পুত্রের সন্ধানে মানববন্ধন করছেন।
সত্যতা: ভিডিওতে থাকা ব্যক্তি মুসলিম, তার নাম বাবুল হাওলাদার। তিনি ২০১৩ সালে নিখোঁজ হওয়া তার ছেলের সন্ধানে মানববন্ধন করেছিলেন।

  1. ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আইসিইউতে ভর্তির খবর:
    গুজবে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস অসুস্থ হয়ে আইসিইউতে ভর্তি হয়েছেন।
    সত্যতা: এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ড. ইউনূস সুস্থ আছেন এবং ছবিটি তার নয়।
  2. পাকিস্তানি জাহাজে অস্ত্র আনার অভিযোগ:
    ভারতীয় গণমাধ্যম দাবি করে, চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তানি সামরিক জাহাজ এসেছে।
    সত্যতা: এটি একটি বাণিজ্যিক জাহাজ ছিল, যার মাধ্যমে শিল্পের কাঁচামাল ও পণ্য পরিবহন করা হয়েছে।
  3. বাংলাদেশে হিন্দু মন্দির ভাঙচুরের দাবি:
    এক ভিডিওতে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে মুসলিমদের দ্বারা হিন্দু মন্দির ভাঙচুর হয়েছে।
    সত্যতা: ভিডিওটি ভারতের পূর্ব বর্ধমান জেলার, যেখানে প্রতিমা বিসর্জনের সময় মাটিতে পড়ে গিয়েছিল।
  4. যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ সতর্কতা:
    গুজবে বলা হয়, বাংলাদেশে সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার কারণে যুক্তরাজ্য বিশেষ ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে।
    সত্যতা: যুক্তরাজ্যের ভ্রমণ সতর্কতা বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই প্রযোজ্য, বিশেষত ভারত ও পাকিস্তানের জন্য এটি বেশি জোরালো।

গুজবের পেছনে উদ্দেশ্য

রিউমর স্ক্যানার মনে করে, এসব মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি এবং নতুন সরকারের প্রতি জনসমর্থনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান

তথ্য যাচাই সংস্থাটি ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতি বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে এবং বাংলাদেশি জনগণকে গুজবে বিভ্রান্ত না হয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছে।