মুক্তি পাগল বাংলার সাহসী সন্তানরা একদিন স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনার অঙ্গীকারে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার—সবাই মিলে অংশ নিয়েছিল এই মহান যুদ্ধে। ১৭৫৭ সালের পলাশীর প্রান্তরে যে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, তার পুনঃউদয় ঘটে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, দীর্ঘ লড়াইয়ের পর স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের আত্মত্যাগ, সাহস ও সংগ্রামে এই বিজয় অর্জিত হয়। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসের শেষে এক লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ। আজ সেই মহান বিজয়ের ৫৩তম বার্ষিকী। এই দিনটি বাঙালি জাতির আত্মত্যাগ ও গৌরবের অবিস্মরণীয় অধ্যায়।
এবারের বিজয় দিবস ঐতিহাসিকভাবে আরও বিশেষ হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের পতনের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ নতুন করে বিজয়ের স্বাদ পেয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ প্রথমবারের মতো এক বছরে দুইটি ‘বিজয় দিবস’ উদযাপন করছে। এই বছরটি শুধু মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় নয়, বরং দীর্ঘ সময়ের অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামেরও বিজয় হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসন এবং ভিন্নমত দমনের পর শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যান। এর পরের সময়ে জনগণের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নতুন একটি অধ্যায় শুরু হয়। এই ঐতিহাসিক বিজয়কে জাতি ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলে অভিহিত করছে। এবার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে সরকারি, আধাসরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। আলোচনা সভা, মিলাদ এবং দোয়া মাহফিল আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হবে। বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা পৃথক বার্তায় দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বার্তায় বলেছেন, স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে দেশকে বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত করতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেছেন, তাদের ত্যাগের কারণেই আমরা আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক। রাষ্ট্রপতি জনগণকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনাকে লালন করে একটি শক্তিশালী ও উন্নত জাতি গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বিজয় দিবস শুধু আমাদের গর্ব নয়, এটি আমাদের শপথেরও দিন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে জাতি একটি উন্নত, সুশাসিত এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছে। এ বিজয় অর্জনে শহীদদের আত্মত্যাগ কখনো ভুলবে না জাতি।
বিএনপিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পৃথক বার্তায় মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, এই বিজয় আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার প্রেরণা।
আজকের বিজয় দিবস নতুন আশার আলো ছড়াবে বাংলাদেশের মানুষের জীবনে। এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার শপথ গ্রহণের দিন।