ঢাকায় আজ থেকে শুরু হচ্ছে চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন। বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশ থেকে প্রায় ৫০০ বিদেশি বিনিয়োগকারী এই আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন, যাদের একটি বড় অংশ চীনের। এছাড়া যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারতের বিনিয়োগকারীরাও উপস্থিত থাকবেন। দেশের পক্ষ থেকে ২ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিচ্ছে। তবে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ৯ এপ্রিল, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
উদ্বোধনের দিন থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে চালু হবে স্টারলিঙ্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা, যা ব্যবহার করে পুরো সম্মেলনের কার্যক্রম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সরাসরি তুলে ধরে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা। সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, সম্মেলনের প্রথম দুই দিন, অর্থাৎ ৭ ও ৮ এপ্রিল বিদেশি প্রতিনিধিরা ঢাকার বাইরে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘুরে দেখবেন। ৭ এপ্রিল তারা চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন, আর ৮ এপ্রিল যাবেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত জাপানের অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে। ওই দিন ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দেশীয় স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বিশেষ সেশনও থাকবে।
৯ এপ্রিল সম্মেলনের উদ্বোধনের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে, যাতে তারা বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন। আশিক মাহমুদ জানান, এবার যেহেতু বিপুল সংখ্যক বিদেশি বিনিয়োগকারী অংশ নিচ্ছেন, তাই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বিদেশিদের। নিবন্ধনের বিপুল সাড়া পাওয়ায় অনেক দেশীয় বিনিয়োগকারীকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।
এই সম্মেলনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, তৈরি পোশাক, কৃষি, স্বাস্থ্য ও হালকা প্রকৌশল খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অংশ নিচ্ছে বিশ্বের কিছু শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডের বিনিয়োগকারীরা। সম্মেলনের সময় মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশে বার্ষিক সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিচে, যা আশানুরূপ নয় বলে মন্তব্য করেন বিডার চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এই অংকটি আরও ১০ গুণ বাড়ানো সম্ভব, তবে তা বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি আরও জানান, আগামী ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে বিনিয়োগ পরিস্থিতিতে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে বলে আশাবাদী। স্টারলিঙ্কের ইন্টারনেট চালু হওয়ার পরপরই তাদের বিনিয়োগ অনুমোদন দেওয়া হবে এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এদিকে, ঢাকায় পৌঁছেছে জার্মানির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল, যারা এই বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন এবং ১০ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। এই প্রতিনিধিদলে রয়েছে জার্মান ফেডারেল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক ও জলবায়ু কার্যক্রম বিভাগ, জার্মান ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্ট, জার্মান এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সি এবং বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা।
জার্মান রাষ্ট্রদূত আচিম ট্রস্টার জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথম জার্মানি থেকে এমন একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সম্ভাবনাগুলো সরেজমিনে পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে তাদের এই সফর। রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ২০২৪ সালে জার্মানি ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৯.৮১ বিলিয়ন ডলার। এই সফরের মাধ্যমে জার্মানির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রতি আস্থা এবং ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সম্প্রসারণে প্রতিশ্রুতি আরও সুদৃঢ় হলো।