শিরোনাম

এপ্রিলেই চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনে তেল আসবে ঢাকায়

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে
ছবি : সংগৃহীত

আগামী মাস থেকে শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম, যা জ্বালানি তেল পরিবহন ব্যবস্থায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। ইতোমধ্যেই পাইপলাইনটির মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে জ্বালানি পরিবহন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ভূগর্ভস্থ এই পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতি বছর ২৭ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল পরিবহন করা সম্ভব হবে, যা দ্রুত ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে সরবরাহ নিশ্চিত করবে। এছাড়া, এ প্রকল্পের ফলে বার্ষিক ২৩৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাইপলাইনের নিরাপত্তার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্বয়ংক্রিয় নজরদারি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সাগরপথে আমদানির পর বর্তমানে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নৌপথ, ট্যাংক লরি এবং রেলওয়ের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। তবে এই প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ এবং এর সঙ্গে রয়েছে চুরি, অপচয় ও পদ্ধতিগত লোকসানের ঝুঁকি। এছাড়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শুষ্ক মৌসুমে নৌপথে নাব্য সংকটের কারণে জ্বালানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে।

এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও পরে দুই দফায় সময়সীমা বাড়িয়ে আরও চার বছর যোগ করা হয়। ফলে প্রকল্প ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। এরপরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।

বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান জানিয়েছেন, চলতি মার্চ মাসেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে এবং আগামী মাস থেকে পাইপলাইনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।

বিপিসির তথ্যমতে, ১৬ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের আড়াইশো কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রতি বছর ২৭ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল পরিবহন করা যাবে, যা ভবিষ্যতে ৫৪ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পাইপলাইন চালু হলে পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাবে, চুরি ও অপচয় কমবে এবং সাশ্রয় হবে বছরে ২৩৬ কোটি টাকা। ফলে ১৬ বছরের মধ্যেই প্রকল্পে বিনিয়োগকৃত ৩৬ হাজার কোটি টাকা উঠে আসবে।

আমিন উল আহসান আরও বলেন, বর্তমানে ছোট ছোট ট্যাংকারের মাধ্যমে জ্বালানি পরিবহন করতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য। পাইপলাইন চালু হলে এসব সমস্যা দূর হবে এবং পরিবহন সহজ ও ব্যয়সাশ্রয়ী হবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন মনে করেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি পরিবহনের প্রয়োজন হয়। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে যদি নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ পরিবহন নিশ্চিত করা যায়, তাহলে এটি দীর্ঘমেয়াদে দেশের জ্বালানি খাতের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

তবে পাইপলাইনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এজন্য আধুনিক প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় নজরদারি ব্যবস্থা, যেমন স্ক্যাডা, টেলিকমিউনিকেশন এবং ক্যাথেডিক সুরক্ষা পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

দীর্ঘ ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ এবং সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো স্থাপন বিপিসির জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষে এ পাইপলাইন এখন প্রায় বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি দেশের জ্বালানি খাতের জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।