সেন্টমার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত উন্মুক্ত রাখার দাবি জানিয়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা উন্নয়ন জোট। তারা উল্লেখ করেছে, পর্যটকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত দ্বীপের মানুষের জীবিকাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে এবং এটি মানবিক সংকট তৈরি করছে। এই বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা দাবি করেছেন, স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে এবং পর্যটন ব্যবসাকে সচল রাখতে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের নেতারা এই দাবি উত্থাপন করেন। সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা উন্নয়ন জোটের চেয়ারম্যান জনাব শিবলুল আজম কোরেশী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সরকার সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের যাতায়াত ও রাত্রিযাপন সীমিত করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা দ্বীপের জনগণের জন্য আত্মঘাতী হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ তাদের জীবিকা হারিয়েছে, এবং পর্যটন ব্যবসায় জড়িত মানুষগুলো মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়েছে।”
জোটের নেতারা আরও উল্লেখ করেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে পর্যটননির্ভর অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। হোটেল-রিসোর্ট মালিক, গাইড, রিকশা চালক থেকে শুরু করে ছোট দোকানদার পর্যন্ত সবার আয়-রোজগার পর্যটনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। তবে সরকার যখন পর্যটকদের ভ্রমণ এবং রাত্রিযাপনে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে, তখন থেকে দ্বীপের অধিকাংশ মানুষ আয়হীন হয়ে পড়েছে।
জোটের বক্তব্য অনুযায়ী, পর্যটন ব্যবসায় জড়িত শত শত কর্মী এবং স্থানীয় ছোট ব্যবসায়ীরা এখন দারিদ্র্যের মুখে পড়েছে। “একজন ট্যুর গাইড বা হোটেল কর্মচারী এখন পরিবারের জন্য খাবার যোগানোর মতো অবস্থায় নেই। আমরা সরকারের কাছে মানবিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আহ্বান জানাচ্ছি,” বলেন শিবলুল আজম কোরেশী।
সরকারি সিদ্ধান্তে সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাত্রিযাপন সীমিত করার প্রধান কারণ হিসেবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যা প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটককে আকর্ষণ করে। তবে অতিরিক্ত পর্যটন এবং পরিবেশ দূষণের কারণে দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ও প্রবাল প্রাচীর ক্ষতির মুখে পড়ছে।
যদিও পরিবেশ সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জোট একমত, তারা মনে করে, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মানুষের জীবনযাত্রাকে সংকটে ফেলা কোনো সমাধান নয়। জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, “পরিবেশ রক্ষার নামে আমরা মানুষের জীবন ধ্বংস করতে পারি না। এটি টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”
জোটের নেতারা স্থানীয় বাসিন্দাদের সমস্যাগুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষা এবং পর্যটন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, পর্যটকদের জন্য নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করে পরিবেশ রক্ষা করা সম্ভব।
প্রস্তাবিত পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে:
জোটের দাবি, সেন্টমার্টিনের টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তা দ্বীপের পরিবেশ এবং মানুষের জীবিকার মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করবে।
“পরিবেশ রক্ষার জন্য আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে, কিন্তু তা মানুষের জীবিকার ক্ষতির কারণ হয়ে উঠলে সমস্যার সমাধান হবে না। আমরা সবাই টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করতে চাই,” বলেন জোটের আরেক নেতা।
সংবাদ সম্মেলনে জোটের পক্ষ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত সেন্টমার্টিন উন্মুক্ত রাখার দাবি জানানো হয়। তারা উল্লেখ করেন, এই সময়ের মধ্যে পর্যটন খোলা থাকলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের আর্থিক সংকট কিছুটা হলেও মোকাবিলা করতে পারবেন। পাশাপাশি, এই সময়ে পরিবেশ রক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, পর্যটকদের জন্য দ্বীপ উন্মুক্ত রাখার পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণের কাজেও তারা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। “আমরা পরিবেশ রক্ষার জন্য সচেতন। তবে আমাদের জীবন-জীবিকা বাঁচাতে পর্যটনের দরজা খোলা রাখতে হবে,” বলেন এক স্থানীয় হোটেল মালিক।
জোটের নেতারা সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান খুঁজে বের করার প্রস্তাব দিয়েছেন। তারা মনে করেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের কথা বিবেচনা করে এবং পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য পর্যটন খোলা রাখা জরুরি। একই সঙ্গে, পরিবেশ রক্ষার জন্যও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। একটি টেকসই সমাধানের মাধ্যমে এই দ্বীপের পরিবেশ এবং অর্থনীতি উভয়কেই রক্ষা করা সম্ভব বলে আশাবাদী সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিবেশ ও পর্যটন রক্ষা উন্নয়ন জোট।