শ্যামলীর শিশুমেলা মোড়ে ফের আন্দোলনে নেমেছেন গণঅভ্যুত্থানে আহতরা, উন্নত চিকিৎসার দাবিতে তারা সড়ক অবরোধ করেছেন। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় তারা জাতীয় অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউট ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনে থেকে সরে এসে শিশুমেলা মোড়ে অবস্থান নেন এবং বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এর ফলে মিরপুর রোডের দুই দিকেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শ্যামলী থেকে আগারগাঁও সড়কেও যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। মিরপুর রোডের উভয় পাশে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আসাদগেট থেকে গাবতলী ও মিরপুরগামী যানবাহনগুলোকে মোহাম্মদপুর হয়ে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
অবরোধকারীদের মধ্যে থাকা নাঈম শেখ জানান, তারা বারবার আশ্বাস পেলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, “গতকাল রাতেও আমরা রাস্তায় নেমেছিলাম, কিন্তু কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। দাবি পূরণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই আমরা পঙ্গু হাসপাতালের সামনে থেকে সরে এসে শিশুমেলায় অবস্থান নিয়েছি। এখান থেকে আমাদের দাবি আদায় না হলে সচিবালয়ের দিকে রওনা দিয়ে সেখানে অবস্থান নেব।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের শেরেবাংলা নগর ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার উদয় কুমার সাহা জানান, “আগারগাঁও থেকে শ্যামলী ও শিশুমেলার দিকে ছোট গাড়িগুলোকে ৬০ ফিট দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আর বড় গাড়িগুলো পাসপোর্ট অফিসের সামনে দিয়ে চালানো হচ্ছে। তবে শিশুমেলা মোড়ে প্রধান সড়ক অবরুদ্ধ থাকায় মিরপুরগামী যানবাহন চলাচলে সমস্যা তৈরি হয়েছে।”
আন্দোলনকারী মোহাম্মদ শরীফ বলেন, “রাস্তা অবরোধে সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু আমাদের আর কোনো বিকল্প ছিল না। অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের বাধ্য করেছে রাস্তা বন্ধ করতে। আহতদের জীবনযাত্রার খবর কেউ নিচ্ছে না, চিকিৎসার বিষয়েও কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যারা আহত হয়েছে, তারা বুঝে গেছে যে তাদের সাথে অন্যায় হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “এবারের আন্দোলন আগের মতো নয়। আমরা হাসিনার গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছি, আমাদের কেউ অন্ধ হয়েছে, কেউ পঙ্গু হয়েছে, কিন্তু আমরা ভয় পাইনি। আহতদের সঙ্গে প্রতারণা হলে, যারা অন্যায় করছে তাদের পরিণতি একই হবে।”
শনিবার রাত ১০টার পর থেকে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে পঙ্গু হাসপাতাল ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিরা সড়কে নেমে আসেন। রোববার সকালে তারা পঙ্গু হাসপাতালের সামনে বেঞ্চ, চেয়ার ও বাঁশ ফেলে রাস্তা অবরোধ করেন। কেউ কেউ সড়কে বিছানা পেতে শুয়ে পড়েন, যার ফলে শিশুমেলা থেকে আগারগাঁও ট্রাফিক সিগন্যাল পর্যন্ত যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা শিশুমেলা মোড়ে অবস্থান নিলে মিরপুর রোডেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আন্দোলনকারীদের নেতা কোরবান শেখ হিল্লোল জানান, শনিবার বিদেশি চিকিৎসকরা এসে আহতদের পরীক্ষা করেছেন এবং মতামত দিয়েছেন যে, যাদের বিদেশে পাঠানো হয়েছে, তাদের ও যারা দেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের শারীরিক অবস্থার মধ্যে তেমন পার্থক্য নেই। বিষয়টি তারা ছাত্র প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি। ফলে তারা আবার আন্দোলনে নেমেছেন। হিল্লোল বলেন, “আমাদের কেউ শুনছে না, কিন্তু আমাদের ভালো চিকিৎসার দরকার।”
এর আগে, গত নভেম্বরেও আহতরা উন্নত চিকিৎসার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছিলেন। সরকার ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা ও চিকিৎসার আশ্বাস দেওয়া হলেও আহতদের অভিযোগ, তারা পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাননি এবং সহায়তাও খুব সামান্য পেয়েছেন।