শিরোনাম

বাংলাদেশের ব্যাটারিচালিত রিকশায় হার্ভার্ড জুটির যাদু

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২ দিন আগে

বাংলাদেশের ব্যাটারিচালিত রিকশা খাতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছেন হার্ভার্ড স্নাতক নিকোল মাও (৩৩) এবং ইওয়ে ঝু (৩২)। তাদের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান টাইগার নিউ এনার্জি ইতোমধ্যে রিকশাচালকদের জন্য একটি সাশ্রয়ী এবং কার্যকরী ব্যাটারি বদলের সেবা চালু করে সাড়া ফেলেছে।

শুরুর পটভূমি: করোনা মহামারির প্রভাব

২০২১ সালে, করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশ সফরে এসে চীনে ফিরে যেতে না পেরে মাও ও ঝু ঢাকায় কয়েক মাস আটকে পড়েন। সেই সময় তারা বাংলাদেশে লিথিয়াম ব্যাটারি খাতে ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। মাওয়ের পরিবার চীনে একটি ব্যাটারি কোম্পানি পরিচালনা করত, যা এই উদ্যোগে তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগায়।

ব্যাটারি বদলের অভিনব ব্যবস্থা

প্রথমে তারা রিকশাগুলোর প্রচলিত লেড-এসিড ব্যাটারির পরিবর্তে লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহারে চালকদের উৎসাহিত করেন। তবে অধিকাংশ চালক নতুন ব্যাটারি কেনার জন্য প্রয়োজনীয় $৪০০ (প্রায় ৪৭,০০০ টাকা) খরচ করতে না পারায় তারা পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনেন।

মাও এবং ঝু দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাটারি বদল স্টেশন চালু করেন। এই স্টেশনগুলোতে চালকরা পুরোনো চার্জহীন ব্যাটারি জমা দিয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে সম্পূর্ণ চার্জড ব্যাটারি সংগ্রহ করতে পারেন। স্টেশনগুলো বিদ্যুৎ গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত, এবং কিছু স্টেশনে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুবিধাও রয়েছে।

ব্যবসার দ্রুত প্রসার

চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া এই উদ্যোগ এখন ঢাকাসহ সারা দেশে কয়েকশ স্টেশনে ছড়িয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামেই রয়েছে ১০০টি স্টেশন। টাইগার নিউ এনার্জির সেবার মাধ্যমে রিকশাচালকরা সাশ্রয়ী খরচে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছেন।

নিকোল মাও ব্লুমবার্গকে জানান, “এই আইডিয়াটি শুরুতে একদমই পাগলামি মনে হয়েছিল। তবে স্থানীয় কর্মী সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং স্টেশন নির্মাণের জন্য জমি খুঁজে বের করা থেকে শুরু করে সব কাজ আমাদের করতে হয়েছিল।”

আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

টাইগার নিউ এনার্জি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) থেকে ঋণ এবং সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওয়েভমেকার পার্টনার্স থেকে বিনিয়োগ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আগামী বছর বাংলাদেশে লিথিয়াম ব্যাটারি তৈরির কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। এর জন্য জমি ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে।

মাও গালফ নিউজকে জানান, “বাংলাদেশে রিকশার ব্যাটারির বিশাল চাহিদা রয়েছে এবং তা আরও বাড়বে। দেশের গ্রামাঞ্চল থেকে শহরে প্রতিদিন লোকজন আসছে এবং তাদের উপার্জনের বড় একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে ব্যাটারিচালিত রিকশা।”

২০২৫ সালের মধ্যে টাইগার নিউ এনার্জি স্টেশনের সংখ্যা ২ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে। পাশাপাশি, এই উদ্যোগ নেপাল ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও ছড়িয়ে দিতে চান তারা। এর জন্য প্রতিষ্ঠানটি ৩ কোটি ডলার সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে।

  • বাংলাদেশ
  • ব্যাটারিচালিত রিকশা
  • হার্ভার্ড জুটি
  •