না, ফুটবল এবারও ‘ঘরে ফিরল’ না। স্পেনই ইংল্যান্ডের ৫৮ বছরের অপেক্ষা আরেকটু বাড়িয়ে দিল। বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়াম লাল রঙের উচ্ছ্বাসে ভেসে উঠল যখন স্পেন ২-১ গোলে ইউরোর ফাইনাল জিতল এবং ১২ বছর পর আবার ইউরোপের মুকুট পুনরুদ্ধার করল।
স্পেনের নিকো উলিয়ামস ও মিকেল ওইয়ারসাবালের গোলের মাঝে ইংল্যান্ডের একমাত্র গোলটি করেন কোল পালমার। চতুর্থবারের মতো ইউরো চ্যাম্পিয়ন হলো স্প্যানিশরা, যা ইউরোপের অন্য কোনো দলের নেই।
ম্যাচের প্রথমার্ধ এতটাই ম্যাড়ম্যাড়ে ছিল যে মনে হচ্ছিল দুই দলই ম্যাচটি টাইব্রেকারে নেওয়ার চেষ্টা করছে। স্পেনের বলের দখল ছিল ৭০ শতাংশ, কিন্তু গোলের দিকে শট মাত্র একটি। ইংল্যান্ডের বলের দখল ছিল ৩০ শতাংশ, তারাও একটি শট নিয়েছিল। তবে কোনো শটই ইংলিশ গোলকিপার জর্ডান পিকফোর্ড বা স্পেনের উনাই সিমনকে কোনো পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি।
যাকে নিয়ে এত আলোচনা ছিল ম্যাচের আগে, সেই স্পেনের ‘বিস্ময়বালক’ লামিয়ে ইয়ামাল প্রথমার্ধে একেবারে অদৃশ্য ছিলেন।
বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়াম আজ ইংলিশ সমর্থকদের আওয়াজে ভরপুর ছিল। যদিও তাদের সংখ্যা বেশি ছিল না, তবে গলার জোরে তারা স্প্যানিশদের ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ম্যাচের শুরুতে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার মার্ক কুকুরেয়ার পায়ে বল যাওয়া মাত্রই ইংলিশ সমর্থকেরা দুয়ো দিতে শুরু করে। হয়তো জার্মানির বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে তাঁর কথিত ‘হ্যান্ডবলে’র কারণেই!
তবে গ্যালারির এই আওয়াজের সঙ্গে ইংল্যান্ডের শুরুটা মিলছিল না। গ্যারেথ সাউথগেটের দল বেশ ঢিমেতালে শুরু করেছিল এবং খুব একটা বলের দখল রাখতে পারেনি। প্রথম দশ মিনিট স্পেনের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। তবে তারাও ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডকে কোনো চ্যালেঞ্জে ফেলতে পারেনি।
মিনিট দশেক পর ইংল্যান্ডের খেলায় কিছুটা গতি আসে। প্রতি আক্রমণে যেতে শুরু করে ‘থ্রি লায়ন’রা। এমনই এক আক্রমণ থেকে ১৬ মিনিটের দিকে বুকায়ো সাকার বাড়ানো বল নিয়ে বক্সে ঢুকে ক্রস করেন কাইল ওয়াকার। কিন্তু সেটা কোনো ইংলিশ খেলোয়াড়ের পায়ে পৌঁছানোর আগেই কুকুরেয়া কর্নারের বিনিময়ে বিপদমুক্ত করেন। ২৮ মিনিটে স্পেনের হয়ে সুযোগ নেন ফ্যাবিয়ান রুইজ, কিন্তু তাঁর শট ইংলিশ ডিফেন্ডার মার্ক গুয়েহির গায়ে লেগে দুর্বল হয়ে যাওয়ায় পিকফোর্ডের জন্য ধরতে কোনো সমস্যাই হয়নি।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ডেক্লান রাইসের ফ্রি-কিক থেকে আসা বল বিপদমুক্ত করতে যান স্প্যানিশ ডিফেন্ডার লে নরমাঁ। বল যায় বাঁ পাশে ফাঁকা থাকা ইংলিশ মিডফিল্ডার ফিল ফোডেনের পায়ে। তবে তাঁর আড়াআড়ি শট রুখে দিয়ে স্কোর ০-০ রাখেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক উনাই সিমন।
মনে হচ্ছিল, দ্বিতীয়ার্ধেও এমনই ফুটবল দেখতে হতে পারে পুরোটা সময়।
তবে সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয় স্পেনের কারণে, এবং সেটা বিরতির পর মাঠে নেমেই। ভুল ভাঙালেন ইয়ামালই। প্রথমার্ধের পুরোটা সময় তাঁকে চোখে চোখে রেখেছিলেন লুক শ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে একটু জন্য চোখের আড়াল করলেন। ইয়ামালও সেই সুযোগটা নেন। তাঁর দুর্দান্ত পাস থেকে নিকো উইলিয়ামসের গোলে স্পেন ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়।
দুই মিনিট পরেই সেটা ২-০ হয়ে যেতে পারত। উইলিয়ামসের পাস পেয়ে বক্সের মাঝখান থেকে শট নেন দানি ওলমো, কিন্তু তা বাইরে দিয়ে চলে যায়।
৬০ মিনিটে কাইল ওয়াকারের হাতে অধিনায়কের দায়িত্ব দিয়ে মাঠ ছাড়েন হ্যারি কেইন। তাঁর বদলি হিসেবে মাঠে নামেন নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে জয়ের নায়ক ওলি ওয়াটকিনস। তবে এদিন তিনি নায়ক হতে পারেননি।
তবে ইংল্যান্ডের সমতা ফেরানো গোলটা এক বদলি খেলোয়াড়ই করেছেন, কোল পালমার। ৭৩ মিনিটে ডান পাশ থেকে সাকা বল বাড়ান বক্সের ভেতর থাকা জুড বেলিংহামের দিকে। বল পেয়েই বেলিংহাম দুর্দান্তভাবে পাঠিয়ে দেন পেছনে থাকা পালমারের দিকে। চেলসি মিডফিল্ডারের দুর্দান্ত শট উনাই সিমন ঝাঁপিয়ে পড়েও আটকাতে পারেননি।
স্পেন অবশ্য এর আগেই ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু ৬৭ মিনিটে ইয়ামালের শট ঠেকিয়ে দেন পিকফোর্ড, আর দুই মিনিট পর ফ্যাবিয়ান রুইজ বল মারেন ক্রসবারের উপর দিয়ে। ৮২ মিনিটে ইয়ামাল আরও একটি সহজ সুযোগ নষ্ট করেন দানি ওলমোর পাস থেকে।
তবে স্পেনকে সেজন্য আক্ষেপ করতে হয়নি। কারণ অধিনায়ক আলভারো মোরাতার বদলি নামা মিকেল ওইয়ারসাবাল তাদের উদ্ধার করেন। ৮৬ মিনিটে কুকুরেয়ার সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে দুর্দান্ত এক শটে তিনি স্তব্ধ করে দেন বার্লিনের ইংলিশ সমর্থকদের।
ইংল্যান্ড নির্ধারিত সময়ের একেবারে শেষ দিকে আবার ম্যাচে ফেরার সুযোগ পেয়েছিল। পালমারের কর্নার থেকে আসা বলে ডেক্লান রাইসের দারুণ হেড ফিরিয়ে দেন উনাই সিমন। ফিরতি বলে হেড করেন মার্ক গুয়েহি, কিন্তু এবার একেবারে গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করেন দানি ওলমো। স্পেন বেঁচে যায় এবং যোগ হওয়া ৪ মিনিট সময় কাটিয়ে শিরোপা উল্লাসে মাতে।