বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম অভিযোগ করেছেন যে, খুনি হাসিনার সমর্থকরা এখন উপদেষ্টা পদ পাচ্ছেন। তিনি রোববার রাতে ফেসবুকে তার আইডি থেকে এই মন্তব্য করেন।
এদিকে, ফ্যাসিবাদবিরোধী বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ফ্যাসিবাদের সমর্থকদের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে। সোমবার দুপুরে সংগঠনটি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং মিছিল আয়োজন করে, যেখানে তারা আওয়ামী সুবিধাভোগীদের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ এবং ফ্যাসিবাদের সমর্থকদের পুনর্বাসনের প্রতিবাদ জানায়।
অন্যদিকে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইনি কাঠামো প্রদান বা বৈধতা দেওয়ার জন্য ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’ শিরোনামে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হতে যাচ্ছে। অধ্যাদেশে উপদেষ্টাদের জন্য যে যোগ্যতা প্রয়োজন এবং তাদের কর্মকাণ্ড কেমন হবে, সে সম্পর্কে বিবিসি প্রতিবেদনে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
৫ আগস্ট, বাংলাদেশের গণআন্দোলনের চাপে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান এবং ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শে এই সরকার গঠিত হয়। তবে বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে কোনো স্পষ্ট বিধান নেই।
পূর্বে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটি বিলুপ্ত করা হয়। বর্তমানে সংবিধানে তত্ত্বাবর্তী বা অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থা এবং উপদেষ্টা পদ নেই।
আইনজীবীদের মতে, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’ জারি হওয়ার মাধ্যমে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইনি বৈধতা প্রদান করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বিবিসি বাংলাকে জানান, “বাংলাদেশে বর্তমানে একটি বিশেষ সরকার কাজ করছে, যা একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে গঠিত হয়েছে।”
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রী পদমর্যাদায় এবং উপদেষ্টা মন্ত্রীর মর্যাদা, পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা পাবেন। রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করবেন, তারপর প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য উপদেষ্টারা নিয়োগ পাবেন। শপথ গ্রহণের পর, সরকারি কর্মচারীদের সহায়তায় উপদেষ্টা পরিষদ সরকার পরিচালনা করবে।
“প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিক না হলে এবং বয়স ২৫ বছরের নিচে হলে কেউ উপদেষ্টা হতে পারবেন না। যদি কেউ বিদেশি দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন বা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন, তাহলে তিনি শপথ গ্রহণ করতে পারবেন না। এছাড়া, নৈতিক স্খলনজনিত কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দুই বছরের বেশি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি উপদেষ্টা পদে নিযুক্ত হতে পারবেন না। বিশেষত, যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তিদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অংশ হতে নিষিদ্ধ করা হবে।”
এছাড়া, উপদেষ্টা হতে চাইলে প্রার্থীকে ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার’ সম্মতি প্রদান করতে হবে।