শিরোনাম

কোটাবিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৫ মাস আগে
কোটাবিরোধী আন্দোলন তীব্রতর হচ্ছে

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে পদযাত্রা, বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন তারা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মের দাবি, মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে গতকালও রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দুপুরে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। বিকেল ৫টায় অবরোধ তুলে নেওয়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দুপুর আড়াইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে সমবেত হন আন্দোলনকারীরা। পরে মিছিল নিয়ে মাস্টার দা সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, উপাচার্যের বাসভবন, রাজু ভাস্কর্য, দোয়েল চত্বর, হাই কোর্ট মোড় ঘুরে শাহবাগে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের শুনানি রয়েছে, আমরা আশা করি তা শিক্ষার্থীদের পক্ষে আসবে। কাল বেলা ১১টায় আমরা আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হব।’ শিক্ষার্থী সারজিস আলম বলেন, ‘যে কোটা প্রথা পুনরায় চালু করা হয়েছে, তার মাধ্যমে ছাত্র সমাজের হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে না, আমরা বৈষম্যের বিপক্ষে।’ আপিল বিভাগের শুনানি চলা পর্যন্ত তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে অপেক্ষা করবেন বলে জানান।

এরপরে যা করা দরকার, তা সম্পন্ন করা হয়েছে। একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছেন। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। জাবি প্রতিনিধি বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের আদেশ বাতিলের দাবিতে গতকাল বিকালে দুই ঘণ্টা অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। এর আগে দুপুর ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক ঘুরে ডেইরি গেইট সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে দুই ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। এ সময় সাভারের হেমায়েতপুর থেকে নবীনগর পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। তবে অবরোধ চলাকালে শিক্ষার্থীরা রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। শিক্ষার্থী সারজিস আলম বলেন, যে কোটা প্রথা পুনরায় চালু করা হয়েছে, তার মাধ্যমে ছাত্র সমাজের হৃদস্পন্দন বন্ধ হচ্ছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে না, আমরা বৈষম্যের বিপক্ষে। আপিল বিভাগের শুনানি চলা পর্যন্ত তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে অপেক্ষা করবেন বলে জানান।
দাবি না মেনে আজ আবারও সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে পদযাত্রা নিয়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কে অবরোধ করেছেন প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী।

জবি প্রতিনিধি জানান, সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিলের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল, ছাত্র সমাবেশ ও পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ে অবরোধ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। দুপুর ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঁঠালতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি বাংলাবাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক ও রায় সাহেব বাজার হয়ে তাঁতীবাজার মোড়ে অবরোধ করে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি জানান, বিক্ষোভ মিছিল এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে মিছিল বের হয়েছে। মিছিলটি নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রদক্ষিণ করে একই জায়গায় অবস্থান করছেন আন্দোলনকারীরা।

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রাহাত হোসেন বলেন, “মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের জন্য একটি স্বাধীন, সার্বভৌম গণতান্ত্রিক এবং বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাহলে এখন কেন স্বাধীন বাংলাদেশে মেধাবী শিক্ষার্থীরা কোটা নিয়ে বৈষম্যের শিকার হবে? প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ যদি কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয় তাহলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা কী করবে? মেধাবীদের পক্ষে অবহেলা এবং বৈষম্য মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।”

শেখরবি প্রতিনিধি জানান, কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ করেছেন রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসে প্রদক্ষিণ করে আগারগাঁও-খামারবাড়ি রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় রাস্তায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। পরে দুপুর ১টার দিকে রাস্তা ছেড়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও প্রজন্ম শাখার সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটার অপপ্রচার এবং অবমাননার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ মানববন্ধন করা হয়েছে। সংগঠনের সহসভাপতি হবিবুর রহমান বলেন, এ কর্মসূচির উদ্দেশ্য তাদের যারা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং অবমাননা চালানো। মেধার ক্ষেত্রে এই কোটা সংক্রান্ত অপপ্রচার অন্যায় এবং প্রতিবাদ করে তাদের কথা। এরকম অবজ্ঞা সম্মুখীন ব্যক্তিদের দ্বারা মুক্তিযোদ্ধা কোটা অপপ্রচার হচ্ছে এবং এটি অন্যান্য সহায়তা দেয়নি।

  • ঊষারবাণী
  • কোটাবিরোধী
  •