আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নেয়। তবে, প্রকল্পগুলোর ব্যয় প্রক্ষেপণের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ২২ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু বাস্তবায়নের পর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকায়। এর মধ্যে জাইকা থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা।
বঙ্গবন্ধু ট্যানেল নির্মাণের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে চীন থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আরও বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এসব প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, কারণ এর ফলে জনগণের ওপর ঋণের বোঝা বেড়েছে।
সূত্র মতে, গত দেড় দশকে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে সাড়ে ১৫ লাখ কোটি টাকার বেশি। এই ঋণ মূলত সরকারের পরিচালন ব্যয় এবং উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নেয়া হয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, দুর্নীতি এবং লুটপাটের কারণে সরকারি ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের বড় অংশই দুর্নীতির টাকা বলে উল্লেখ করেছেন তারা। এতে বিদেশি ঋণ পরিশোধের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, স্বৈরশাসনের সময় সরকার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে বেশি মনোযোগ দেয়, কারণ এতে লুটপাটের সুযোগ থাকে এবং জবাবদিহিতা থাকে না। এতে তারা উন্নয়নের ছবি জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত দেড় দশকে দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে নেয়া মোট ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার নিয়েছে সাড়ে ১৫ লাখ কোটি টাকার বেশি। অর্থনীতিবিদদের মতে, দুর্নীতির কারণে এই ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নের নামে বিদেশি ঋণ নেয়া হয়েছে অতিরিক্ত পরিমাণে, এবং ব্যয়ের পরিমাণ অনেক বেশি দেখানো হয়েছে। এতে একটি চক্র সরাসরি লাভবান হয়েছে।
ঋণের পাশাপাশি, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অর্থপাচারের পরিমাণও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিএফআই-এর তথ্য অনুযায়ী, গত দেড় দশকে প্রায় ১৫ হাজার কোটি ডলার পাচার হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১৭ লাখ কোটি টাকারও বেশি। অর্থনীতিবিদদের মতে, এটি দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।
ড. সেলিম রায়হান বলেন, প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে যারা সুবিধা পেয়েছে তারা টাকাগুলো বিদেশে পাচার করেছে, যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, লাগামহীন দুর্নীতি ও অর্থ পাচার ঠেকানো গেলে দেশ অনেক আগেই উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতো।